রবি আড্ডায় প্রদীপ ঘটক

বর্ধমান স্টেশনের ছোট কাউন্টারে ত্রিশ টাকা দিয়ে বললাম “একটা দুর্গাপুর রিটার্ন দিন।”

রামগরুড়ের ছানা টিকিট কাউন্টারের ভদ্রলোক গম্ভীর মুখে বললেন “এখানে রিটার্ন টিকিট হয় না।” বলে দশটাকার নোটটা আমাকে ছুড়ে দিলেন। তারপর দুর্গাপুরের টিকিট আর পাঁচটা ছোট একটাকার কয়েন। আমি স্ফীতচোখে বললাম “ছোট কয়েন নেব না, পাঁচটাকার কয়েন দিন।”

“কেন, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ব্যান করেছে?”

“না, আমাদের ওখানে চলে না। আচ্ছা, আমি পাঁচটাকা দিচ্ছি আপনি দশটাকা দিন।”

কাউন্টারের ভদ্রলোক দু’হাত মুখের কাছে এনে রাগত স্বরে বললেন “কাউন্টার ছাড়ুন, লাইনে ভিড় আছে।”

ততক্ষণে পিছনের যাত্রীরা “ও দাদা, কি হল?” চিৎকার জুড়েছেন।

লাইন থেকে বেরিয়ে এসেই টিকিটটা মানি ব্যাগে রেখে উদ্গ্রীব হয়ে উঠলাম পাঁচ ‘রূপসী’কে ‘পাত্রস্থ’ করতে। ছোট্ট গ্ল্যামারাস দেহ, একপিঠ লতায় শোভিত, অশোকস্তম্ভে দীপ্ত অপর পিঠ-তবু মানুষের এত অনীহা কেন?

সামনেই এক খবরের কাগজওয়ালা। খবরের কাগজ কিনতে পাঁচটা কয়েন দিতেই বলল “পাঁচটা নেব না, দুটো নিতে পারি।” বাধ্য হয়ে একটা দু’টাকার কয়েন দিয়ে কাগজ নিলাম।

একহাতে তিন ‘অরক্ষণীয়া’ অন্য হাতে কাগজ নিয়ে চললাম স্টেশনের দিকে। অাসানসোল লোকাল এসে দাঁড়াল। চেপে পড়লাম, খবরের কাগজে মনোনিবেশ করলাম। কিন্তু মনে মনে এক চিন্তা।

সহসা এক লেবু-চা ওয়ালা। এক কাপ চা নিয়ে বাড়িয়ে দিলাম তিন কয়েন। হাত মেলে কয়েন ছড়িয়ে বললেন “কতদিন আগে ট্রেনে চা খেয়েছেন? পাঁচ টাকা দিন,তাছাড়া ছোট কয়েন নেব না।” অগত্যা দশটাকা ভাঙিয়ে………

এবার এক ভিখারি। চেষ্টা নিতেই বললেন “ছোট টাকা লোব না।”

আসার পথে বাস কন্ডাক্টরকে পঁচিশ টাকা ভাড়ার বদলে তেইশ টাকা দিতেই হাতে কয়েন তিনটি গুঁজে দিলেন, তারপর মিষ্টি হেসে বললেন “কুড়ি টাকাই নিলাম বেশ!”

আমি মানসচক্ষে একই তিন ‘সুন্দরীর’ করুণ পরিনতির কথা ভাবতে লাগলাম। বেশ কিছুদিন ধরেই চারআনা-আটআনার কয়েনগুলিকে বাড়ির উঠোনে, খামারে, ভাইপো-ভাইঝির খেলার সরঞ্জামের ভিতর অবহেলিত হতে দেখেছি। তবে কি………

চুপিচুপি বলি,আমি শীতকালে প্যান্ট এক দু’বার পরলে কাচি না। কি বললেন? নোংরা? নিজের বউকে হুকুম করা যায়। বৌদিদের আর কত বলি! বাড়ি ফিরে প্যান্টটা ঝেড়েঝুড়ে আলমারিতে তুলতে যেতেই মেঝেয় কান্নায় ভেঙে পড়ল তারা। আমি পরম মমতায় তুলে সান্ত্বনা দিতে দিতে বললাম “কি করি বল্, কম চেষ্টা তো করলাম না।” পকেটে রাখতে রাখতে বললাম “সপ্তাহ দুয়েক থাক এখানে। তারপর দেখছি।”

তারপর আর মনে ছিল না। কয়েকদিন আগে কলকাতা যাবার সময় মেমারিতে ট্রেন ধরার জন্য স্টেশনে যাচ্ছি,পথে একটা সপ্তাহের শেষ বারের মন্দির। বাইরে প্রণামী বাক্স। হঠাৎ মনে পড়লো ‘তিন সুন্দরীর’ কথা। ‘সৎ পাত্রে’ দান করতে না পেরে তাদের প্রণামী বাক্সে ‘দেবদাসী’ করে দিলাম।

দেবতার চেয়ে ভালো পাত্র আর কারা আছেন?

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *