রবি আড্ডায় উপল মুখোপাধ্যায়
—- লোকের মনে তো কত কীই…..
—– কোন কিছুই এমনি এমনি হয় না।
—– তা বটে।
—– কিছু বার্তা শূন্যে রয়ে যায়।
—– মানে ?
—– মাঠ জুড়ে তারা কথা বলে।
—– আর এতো যে স্থাপত্য , এতো প্রাসাদ ,সেখানে হারেম , গুমঘর , সুড়ঙ্গ , তলোয়ার আর তার তীক্ষ্ণ ধার ?
—– সবার আগে মাঠ। যে মাঠে কিছুই হয়নি।
—– জমে গেছে ! তারপর ?
—– তারপর সে মাঠে যুদ্ধ হল , স্থাপত্য হল , বাদশাহী জমক হল , ঠমক হল ,মাঠ আর থাকল কি ?
—– কী করে থাকবে মাঠ ? ভুলে যাচ্ছ মাঠও তৈরি হয়। আর ….
—– আর ?
—– তা করেন রাজা -বাদশাহ।
—– সমান মাঠের কথা বলছি না।
—–বটে !
—– এবড়ো খেবড়ো এক মাঠের কথা বলছি , সে মাঠ রায়তের -চাষীর। সে মাঠে চাষ হচ্ছে।
—– আশপাশে কোন রাজা নেই – বাদশাহ ?
—–হ্যাঁ।একজন…
—– আছে ?
—–হ্যাঁ।
—– আছে একজনও ?
—– তাঁকে দেখা যাবে।
—–যাবে ?
—–হ্যাঁ।
—– কে সে ?
—– একজন রাজা।
—– আর বাদশাহ ?
—– একজন রাজাকে দেখা যাবে , তিনি রায়তের রাজা ।
—– আর বাদশাহ ?
—– তিনি দ্রুতগামী ঘোড়ার সওয়ার। তার ফৌজ লুকিয়েছে , এবার শুরু করবে…..
—– আর বাদশাহ ?
—– বাদশাহের ফৌজ অনেক বড় , বাদশাহ পণ্ডিত ব্যক্তি , সারাটা জীবন ধরে আইনের ব্যাখ্যা আর তার পূর্বাপর প্রয়োগ তাঁর অভীষ্ট তবু তিনি রায়তকে দেখতে পান না। কিছুতেই পান না। তাঁর অনেক আড়াল। সে সব পেরিয়ে অনেক দূর থেকে আর যাই হোক রায়তের দেখা মেলে না।
—– কী সব বলছ ?
—– রায়তের -চাষীর রাজার কথা বলছি আর আইনের বাদশাহের কথা বলছি।
—– রায়তের -চাষীর রাজার কথা আর আইনের বাদশাহের কথা ?
—– বলছি ছত্রপতি শিবাজি মহারাজের কথা , বলছি ঔরঙ্গজেব আলমগীরের কথা।
—– তাই বল ! বাইনারি ! তুড়িতে উড়ে যায় কথা ও বার্তা !
—– এত সোজা কি ?
—– মানে ?
—– এত সোজা তাঁদের কথা বলা ?
—– কেন ?
—– রায়তের রাজার কথা বলেছিলেন গোবিন্দ পানসারে। হু ওয়াজ শিবাজি ? মারা গেলেন চাষীর রাজার কথা উচ্চারণ করায়। বুলেট ফুঁড়ে দিল।
—– কেন ?
—– দেয়।
—– কী ?
—– ফুঁড়ে দেয়।
—– কী ?
—– বুলেট।
—– আর আইনের বাদশাহের কথা বললে ?
—– ভোগীরা মানছে না ! সবাই শরিয়াত শরিয়াত করে উঠছে !
—- ভোগী ?
—– উঁহু ভোগীরা।
—– কিসের ?
—– ধর্মের।
—– কোন ধর্ম ?
—– ধর্ম কটা ?
—– অনেক।
—– ভোগীও অনেক।
—– বলছ ?
—– যা বাব্বা ! বললে তো তুমি !
—– আমাকে দিয়েই বলাবে ?
—– ঠিক তাই !
—– তাহলে বলতেও হবে কিন্তু।
—– কী ?
—– রাজা আর বাদশাহের কি দেখা হল ?
—– বলাবেই ?
—– অবশ্যই।
—– তা হলে শোন।
—– বল।
—– দুর্গম দক্ষিণাত্যের টেরেনে রাজার দ্রুতগামী ঘোড়সওয়ার আর ধীরে চলা বাদশাহের বাহিনীর দেখা প্রায়ই হতে থাকে। অবশ্য সে অনেক পরের কথা।