রা জা
ছেলেটা অনলাইন প্রোডাক্টের হোম ডেলিভারির কাজ করে। পিঠে জাম্বো সাইজের ব্যাগ, ভীষণ ভারি। তার ওপর বাইকের সামনের চাকা পাংচার। হাঁটছে, এই গরমে বাইক ঠেলে, পিঠে ব্যাগের ভার নিয়ে, ঘেমে একসা। তবু মুখে লেগে আছে প্রশান্তির হাসি। কানে হেডফোন গোঁজা, ফোনের ওপ্রান্তে বান্ধবী…
মেয়েটা টোটো থেকে নেমে মোবাইল কানে ধরে, “হ্যাঁ, আজ আবার একটু দেরি হয়ে গেল। এই তো মায়ের ওষুধ কিনে, বাড়ি পৌঁছে স্নান করেই ফোন করছি, এখন রাখি”…
ছেলেটার ডিউটি আওয়ার ১২-১৩ ঘন্টা। রোজ রাত করে ঘরে ফেরে। মেয়েটাকে ৮ ঘন্টা ফ্লোরে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তারপর আরও এক ঘন্টা, মাঝেমাঝে তারও বেশি এদিকে ওদিকে লেগে যায়। বাড়ি ফিরতে ৪৫ মিনিট।
ছেলেটার সাপ্তাহিক ছুটি রোববার, মেয়েটার বৃহস্পতি। মাসের পর মাস দেখা হয় না ওদের। ফোনে কথা হয় শুধু, স্বপ্ন বোনা হয়। স্বপ্নের ঘোর লাগে, মনে মনে ওরা কখনও মধুবন পার্ক, কখনও বা তোর্ষার চরে পৌঁছে যায়। ঘাটে বাঁধা নির্জন নৌকায় বসে, হাতে হাত রাখে, চুমুটুমু খায়।
আমাদের সাধারণ দৃষ্টিভঙ্গিতে ওরা প্রেম করে। কিন্তু এমন রুক্ষ শহরের হাওয়ায় নিঃশ্বাস নিতে নিতে ঐ ছেলেটা আর মেয়েটাই শুধু জানে, এই প্রেম আসলে ওদের একমাত্র প্রতিরোধ, বিপ্লব এবং অবশ্যই মে-দিবসের ছুটি।