রবি আড্ডায় স্বর্ণা দাস
আলো মহাবিশ্বের শূন্যতার পরিবর্ধিত নাম। শূন্য বলতে মনে আসে অন্ধকার , কিন্তু কবি ভাবনার পথ সে কথা মানবে কেনো? নিরবধি কাল থেকে কালান্তরে পাশাপাশি অবস্থিত দুটি সত্বার নামই তো আলো – অন্ধকার , যারা পরস্পরের জ্যোতিতে উজ্জ্বল পরস্পরের বিচ্ছুরিত কণায় মিলিত না হওয়া বেদনা।
কবি এক অনন্তের পথযাত্রি তার যাত্রাপথের সীমা পরিসীমা নেই চেতনা থেকে চেতনাতীত সর্বত্রই সে বিচরণ করে উঠে যায় আলোর সিঁড়ি বেয়ে অন্ধকার শূন্যতায়। কবি মাত্রই ভাবনার রংমহল গড়ে, টুকরো টুকরো কথাবিশ্বে রচিত হয় আখ্যান, লিখে ফেলা হয় নীলিকার প্রতি এক সুদীর্ঘ যাপন, জীবন ও যাত্রা পথের কথামালা। কবি অভীককুমার দে’র দীর্ঘকবিতার বই ‘ আলোর সিঁড়ি বেয়ে ‘ এক যাত্রা পথের আখ্যান।
যে পথে মগ্ন হয় মন ধ্যানস্থ অনুভবে সন্ধান চলে ভেতর নদীর ” তুমি দৃষ্টির মতোই সুন্দর / ধ্যানস্থ বিন্দু জানে, চোখের মণি কালো / আমি জল লুকানো ভেতর নদী.. ” নিরাসক্ত কবি মন এক অসীম পাওয়াকে পেতে চায় কবিতার পংক্তিতে পংক্তিতে । বিভেদিত চেতনার মধ্যবিন্দু থেকে সন্ধান চলে অসীমের। তুমি ময় জগৎ, কিন্তু এ তুমি কে? কবি প্রেয়সী? না কবি কল্পনার সেই অনুভবী? যাকে তিনি অনুভবে পান ইন্দ্রিয়ের দেখায় যার কোনো অস্তিত্ব নেয়। ইন্দ্রিয়াতীত সেই কল্পনায় আসক্ত থাকেন তিনি ” সবেতেই তুমি তুমি / শুধু তোমাকেই দেখি না কোথাও! “
নিরাসক্ত কবি মন মিশে যায় প্রকৃতির অঙ্গনে, মিলে যায় মেঘে মেঘে রোমাঞ্চিত উত্তরাধীকারের স্মৃতি ও ব্যাথা। গিলতে থাকা ছবির মতোই গতানুগতিক হয় দিন। উন্মিলিত শরীরের মায়াবি আমন্ত্রণ একঘেয়ে হয়, তবুও কোথাও ডানা মেলে পাখি সাঁতার কাটে ভোর , এসবের একত্রিত যাপনে শরীর বেয়ে রোদ নামে আর অনুসন্ধান চলে জীবন যুদ্ধে হার না মানা এক পথিকের আলোর সন্ধান।
শেষ বললেই কী সব শেষ, এই যে শেষের পরে অবশিষ্টটুকু থেকে নতুন ঝাকুনি আবার খেলাঘর, দিন- রাত, রাত- দিন, প্রতিদিনের চর্যা ” একেকটি পাতায় কিছু সবুজ তখনও থাকে, / শেষ ঝাঁকুনির পর অন্তঃসারশূন্য।” আর শূন্যতার ঝরা জলে নীবর হয় নদী , হারিয়ে যায় আলো তবুও কবি মন ভালোবাসে আশা জাগে মনের গহীনে পথ পেয়ে যাবে কোনো এক আলোর পথযাত্রি।
শব্দকল্পের আনাগোনায় পরিচিত গতানুগতিক চিত্রও হয়ে উঠেছে অনন্য। যে বোধ থেকে জন্ম হয় কবিতার, সেখানে বাসা বাঁধে পরস্পরে, মানুষ ও প্রকৃতি মুখোমুখি পথ চলে সন্ধান চলে জীবনের।
দীর্ঘ কবিতার রস ভঙ্গের একাধিক সম্ভাবনা থাকে, শুরু থেকে পাঠকের আগ্রহ ও কবি ভাবনার যৌথ আকর্ষণ ধরে রাখা সহজসাধ্য নয়, সেদিক থেকে কবি অভীককুমার দে’র ‘আলোর সিঁড়ি বেয়ে’ উত্তীর্ণ বলা যায়। পাঠকমনের রসবোধ এখানে বিঘ্নিত হবে না। শুরু থেকে কবিতার পরতে পরতে রয়েছে কবির এক জীবন অনুসন্ধান। দুই বিপরীত পরিপূরক সত্বার বহমানতা সমগ্র কাব্যকে করে তুলেছে সুখপাঠ্য। রসগ্রাহী পাঠকের এক অনন্য রসের ভান্ডার।
অলোর সিঁড়ি বেয়ে
অভীককুমার দে
নিহারিকা পাবলিশার্স
আগরতলা, ত্রিপুরা
মুদ্রিত মূল্য – ১৪০