রবি আড্ডায় শৌভিক রায়

(তৃতীয় পর্ব)

অরণ্য কি শুধুই উপভোগের? কিছু শেখার নেই তার কাছে?

প্রশ্নটা সঙ্গত। বন্যপ্রাণীর স্বাভাবিক বাসস্থান, সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদির পরেও, রয়ে যায় আরও কিছু।

নিশার কথাই ধরা যাক। ঝকঝকে হাসির এই ছোট্ট মেয়েটির বাবা কাজিরাঙ্গা অরণ্যের কর্মী। গ্রাজুয়েশন করে নিশা পারিবারিক ছোট্ট দোকানটি দেখভাল করছে। পাশাপাশি চলছে চাকরির প্রস্তুতি। চা, পিঠে, সিঙাড়া, চিপস, অর্ডার করলে মুরগির মাংস ইত্যাদি সবই পাওয়া যায় ওদের দোকানে। দুদিন বেশ আড্ডা জমল ওদের সবার সঙ্গে। বিহুর জন্য তৈরি পিঠে দিয়ে ওরা পরদিন আমাদের আপ্যায়ন করল।

কাজিরাঙ্গাকে কেন্দ্র করে এরকম অজস্র ছোট-বড় দোকান রয়েছে। জখলাবাঁধা পার করেই শুরু হয়ে যায় সেসব। রয়েছে প্রচুর রিসোর্ট, হোটেল ও হোমস্টে। তবে সাধারণ মানুষদের বাড়িঘরে কিন্তু দারিদ্রের স্পর্শ টের পাওয়া যায়। কিন্তু দারিদ্র যে পরিচ্ছন্নতার অন্তরায় হতে পারে না, সেটা শিখতে হয়ে তাঁদের কাছে। প্রতিটি বাড়ি দৃষ্টিনন্দন, পরিষ্কার ও যত্নে রাখা।

পর্যটন আর চা বাগান এখানকার মূল জীবিকা। ফলে স্থানীয় মানুষদের পাশাপাশি হোটেল ও রিসোর্টে মানুষের ভিড় যথেষ্ট। এসব কিছুই কাজিরাঙ্গার বাস্তুতন্ত্রে কোনও প্রভাব ফেলছে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক হতেই পারে। তবে কাজিরাঙ্গা যে প্রচুর সংখ্যক মানুষকে অন্ন সংস্থান করছে সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।

এই প্রসঙ্গে বলব অর্কিড পার্কের কথা। ইতিমধ্যে উত্তরবঙ্গ সংবাদে (১২ মে, ২০২৫) উত্তর সম্পাদকীয় পাতায় সেই বিষয়ে লিখেছি। তাই বিস্তারিত যাচ্ছি না। ষোলো বিঘা জমির ওপর, ৫০০ প্রজাতির অর্কিড নিয়ে গড়ে তোলা, দেশের বৃহত্তম অর্কিড পার্কটি না দেখলে বোঝা ঠিক যায় না। অর্কিড ছাড়াও এখানকার মিউজিয়ামে অসমের চিরাচরিত বাদ্যযন্ত্রের বিপুল সম্ভার রয়েছে। দেখা যায় কীভাবে তাঁত বোনেন স্থানীয়রা। কোহরা রেঞ্জের এই পার্কে প্রতি সন্ধ্যায় বর্ণময় অসমের সংস্কৃতি তুলে ধরেন স্থানীয় শিল্পীরা। বিভিন্ন জনজাতির নৃত্য-গীত পরিবেশিত হয়। পরবর্তী পর্বে বিশেষ কিছু না লিখে সেই অনুষ্ঠানের কিছু ভিডিও পোস্ট করব। আমি নিশ্চিন্ত, সেগুলি রসিকজনের ভাল লাগবে। অর্কিড পার্কের এই অনুষ্ঠানের কথা আমাকে প্রথম বলেছিল শিলিগুড়ির ভাই চন্দ্রাংশু। কৃতজ্ঞ রইলাম ওর কাছে।

কাজিরাঙ্গায় আমাদের রিসোর্টে পেলাম কফি গাছে ধরে থাকা কফি ফল। রইল তার ছবিও। রিসোর্টের মালিক অহমিয়া যুবক অর্পণ নিজে ফিজিওথেরাপিস্ট। বাবা ছিলেন ইঞ্জিনিয়ার, মা কলেজে পড়াতেন। ছেলেটির সরল ও সুন্দর ব্যবহার মন ভরিয়ে দেয়। এতটাই মিশে গেল আমাদের সঙ্গে, রীনাকে রান্নাঘর ছেড়ে দিল নিজেদের মতো খাবার বানানোর জন্য।

এই পোস্টের সঙ্গে নিজেদেরও কিছু দিচ্ছি। ছবি রইল আমাদের সঙ্গী কুরবানের। ওর গাড়িতেই আমরা ঘুরে বেড়াই এদিক-ওদিক।

যাঁরা আগামীতে কাজিরাঙ্গা যেতে চান, তাঁদের বলব অর্কিড পার্কের অনুষ্ঠান অবশ্যই দেখবেন। যদি চারটি জোনেই সাফারি করতে চান, তবে দুদিন লাগবে। দেড় দিনে তিনটে করা যায়। তবে বাগোরি আর কোহরাতেই বেশি চলে সাফারি। বুড়া পাহাড়ের চাহিদাও কম নয়।

অন্যদিকে পক্ষীপ্রেমীদের স্বর্গ হল কাজিরাঙ্গা। ভাল ক্যামেরা থাকলে ছবি তুলে মজা পাওয়া যায়। তবে তার জন্য বিশেষ সময় হল শীতকাল, যখন পরিযায়ীরা ভিড় করে আগরতলি জোনে। অন্যান্য জোনে তাদের দেখা মিললেও, সংখ্যায় ও বৈচিত্রে কিছুটা কম।

কাজিরাঙ্গার বন্যা মারাত্মক। এর আগে খবরের কাগজে এখানকার বন্যায় পশুদের ভেসে যাওয়া বা জাতীয় সড়কে আশ্রয় নেওয়ার কথা পড়লেও, ব্যাপারটা বুঝে বিস্মিত ও অবাক হলাম। এতটাও ভয়ানক হতে পারে ডিফলু সহ অন্যান্য নদীর বন্যা! কে বলবে একদিকে পাহাড় আর তার পাদদেশে ছবির মতো কাঞ্চনগুড়ি, হাতিখুলি, মেঠানি ইত্যাদি চা বাগান আর অসাধারণ ল্যান্ডস্কেপের অরণ্য সুন্দরী কাজিরাঙ্গা কখনও কখনও অত্যন্ত ভয়ানক!

(ক্রমশ)

প্রথম পর্বের লিংক-
https://www.facebook.com/share/p/16iSAt9Ats/
দ্বিতীয় পর্বের লিংক-
https://www.facebook.com/share/p/1Ag6AaWKQR/

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *