রবি আড্ডায় শৌভিক রায়

দ্বিতীয় পর্ব

মেরি কার্জন। নামটা চেনা? না বোধহয়।

লর্ড কার্জন? হ্যাঁ। জানা।

কিছু বোঝা গেল?

ঠিক ধরেছেন। ভাইসরয় লর্ড কার্জনের স্ত্রী।

কিন্তু কাজিরাঙ্গা প্রসঙ্গে হঠাৎ এঁদের কথা কেন? আসলে এঁরা না থাকলে কাজিরাঙ্গাকেই হয়ত পেতাম না আমরা। ইংরেজরা আমাদের দেশ থেকে বেশিটাই নিয়েছে। কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু দিয়েছেও অনেকই। অস্বীকার করার উপায় নেই।

সেদিন যদি মেরি কার্জন তাঁর ভাইসরয় স্বামীকে কাজিরাঙ্গা গঠনের কথা না বলতেন, তবে হয়ত হতই না এটি।

মেরি গিয়েছিলেন কাজিরাঙ্গায়। ভারতের বিখ্যাত এক শৃঙ্গ গণ্ডার দেখতে। এমনই দুর্ভাগ্য যে, একটিও দেখতে পারেননি তিনি। তাঁর বুঝতে অসুবিধে হয়নি যে, এই অত্যন্ত বলশালী নিরীহ প্রাণীটির অস্তিত্ব বিপন্ন। সুতরাং দেরি না করে লর্ড কার্জনের কাছে দরবার করেন মেরি। আর তার ফলেই ১৯০৮ (অনেকের মতে ১৯০৫) সালে গড়ে ওঠে ২৩২ বর্গ কিমির পৃথিবীখ্যাত এই পার্ক।

আজ অবশ্য পার্কের এলাকা আরও বড়। ৪৩০ বর্গ কিমি। গণ্ডারের সংখ্যা এই মুহূর্তে ২২০০-এর বেশি। পৃথিবীর তিন ভাগ গণ্ডারের দুই ভাগই কাজিরাঙ্গার। রয়েছে হাতি, হরিণ, বুনো মোষ ইত্যাদি নানা প্রাণী। বিভিন্ন প্রজাতির পাখিদেরও দেখা মেলে কাজিরাঙ্গায়। এলিফ্যান্ট ঘাসের প্রান্তর, জলাশয় আর গভীর অরণ্যের কাজিরাঙ্গায় বাঘ দেখা যাচ্ছে বলে, ২০০৬ থেকে টাইগার রিজার্ভের মর্যাদা পেয়েছে এটি।

আর ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা? সে তো লেগেছে সেই ১৯৮৫ সালে!

চারটি ভাগে বিভক্ত কাজিরাঙ্গা। সেন্ট্রাল বা কোহরা জোন, ওয়েস্টার্ন বা বাগোরি জোন, ইস্টার্ন বা আগরতলি জোন এবং ঘোড়াখাটি বা বুড়া পাহাড় জোন। সাফারি চলে সব জায়গাতেই। তবে পাখির দেখা বেশি মেলে ইস্টার্ন বা আগরতলি জোনে। বিশেষ করে শীতকালে। বুড়া পাহাড়ের নৈসর্গ অত্যন্ত সুন্দর। যারা আগে পাহাড় ও চা বাগান দেখেননি, তাদের ভাল লাগতে বাধ্য। অন্য সব সাফারিতেই মোটামুটি একই ধরণের বনচরদের দেখা পাওয়া যায়।

আমরাও পেলাম। এত গণ্ডার…এত গণ্ডার যে কী আর বলব! কবিতার লাইন বদলে বলতে ইচ্ছে হচ্ছিল, এখানে গণ্ডার গাভীর মতো চরে। পাওয়া গেল হাতি, হরিণ, মোষ আর নানা ধরণের পাখিও। গত সন্ধ্যায় হামলে পড়ে ছবি তুলে সত্যিই যে বোকামি করেছি, সেটা বুঝতে পেরে নিজেরই তখন হাসি পাচ্ছিল।

হাতিরা অবশ্য একটু বিরক্ত হয়েছিল আমাদের ওপর। বিশেষ করে দলপতিটি। রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকল খানিকক্ষণ। শেষটায় আমাদের গাইড সাইদুল প্রার্থনার মতো বিড়বিড় করে বলতে শুরু করল, বাবা জাআআ এ বাবা যাআআ..মোরা তোর ব্যাটা রে....যাতি দে বাবা...এ বাবা... সাইদুলের প্রার্থনার জন্যই হোক বা অন্য কোনও কারণে, শেষটায় তিনি পথ ছাড়লেন। আমরাও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম।

গণ্ডার আর হাতির অবাধ বিচরণ সত্বেও আমার কিন্তু ভাল লাগল বুনো মোষগুলোকে দেখে। কী রাজকীয় চেহারা। চোখের দৃষ্টি কখনও সরল, কখনও ক্রুর। হবেও সেটা। ওদের এলাকায় আমাদের এই দখলদারি কত আর সহ্য করবে! প্যাঁচার বসে থাকা, কচ্ছপদের রোদ পোহানো ইত্যাদি দেখে একটি জায়গায় এসে চোখ কপালে উঠল।

সেখানকার পিলারে মার্ক করা রয়েছে, বর্ষায় কাজিরাঙ্গায় জলস্তর কোথায় ওঠে! কী মারাত্মক কাণ্ড। কীভাবে সামলায় এই বুনোরা?

প্রকৃতির কাছে এরা সত্যিই অসহায়….

(ক্রমশ)

প্রথম পর্বের লিংক-
https://www.facebook.com/share/p/19Lm6Vgzht/

sauvikr.blogspot.com

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *