রবি‌ আড্ডায় সাধন দাস

আলবেনিয়ান গল্পকার ড্রিতেরো এগোল্লির “দি এইটথ সোনাটা” 

ভাবানুবাদে সাধন দাস

দূরসম্পর্কের গাঁইয়াভূত কাকা এসেছেন বেড়াতে। হোগলার ছাতা মাথায় একপাল কাদাঘাঁটা শুয়োর আর গোঁয়ার কুত্তা চড়ানো ওর এলেমদারি। হুড্ডু হুড্ডু এ গাঁ সে গাঁ হদ্দ চষে সদ্য এসেছেন শহর চাখতে। সঙ্গে এসেছে উড়নচণ্ডি মেয়ে। পাঁড়গাঁইয়া বাপকো বেটি। 

মেয়েটা হুটমুট বেরিয়ে গেলো শহর ঢুঁড়তে আর ফেরেনি! এতোবড়ো বিভুঁই শহর, কাকা খুঁজে খুঁজে হয়রান। কোন গাড্ডায় তলিয়ে গেছে, সোমত্ত মেয়ে কে জানে! কোনো এত্তেলা হলো না।

মেয়েটাকে খুইয়ে বুড়ো কাকা বেশ মুষড়ে পড়েছেন।

রাত যেনো নেমেই আছে। ইজিচেয়ারে আধশোয়া কাকা চোখ বুঁজে বিড়ি টানছেন। বিড়ির আগুনে লাল, রোদেপোড়া মুখখানা ম্লান, শুকিয়ে এতোটুকু হয়ে গেছে। দিলখোলা হল্লামার্কা মানুষটা মিইয়ে মুক।

রাজধানী শহরে কাকা এই প্রথম। শোক বিধ্বস্ত আউল বাউল বুড়োটাকে দেখে মায়া হচ্ছে। সরল উজ্জ্বল দুটি চোখ নিভে নিভে আসছে। কী ভাবছেন কে জানে? সারাদিন শহরটাকে চষে বেড়িয়েছেন।

হারিয়ে যাওয়া মেয়েকে ভুলে থাকতে মনুমেন্টের গল্প করলেন, চিড়িয়াখানার গল্প, আকাশ ফোঁড়া ঘর বাড়ি সভ্যতার উন্নতির গল্প। বলতে বলতে কখন আপন মনে গুম মেরে গিয়েছেন। তলিয়ে গিয়েছেন ভাবনার গভীরে। আমিও থানা, হাসপাতাল, টিভি, কাগজের অফিস ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত, বিষণ্ণ হয়ে উঠেছি। 

দমবন্ধ ঘরের হাওয়া। বদলানো দরকার। উঠে পড়লাম। দিশাহারার মতো ঘরের মধ্যে দু এক পাক খাচ্ছি। চোখে পড়লো ঘরের কোণে গ্রামোফোন। প্রথমেই হাতে উঠে এলো বড়ে গোলাম আলি খাঁ সাহেবের দরবারি কানাড়া। থমকে গেলাম। কাকা কি বিরক্ত হবেন? দরবারি কানাড়ার খ্যাতিতে ভরসা রেখে দিলাম চাপিয়ে।

জানালা খোলায় ছিলো। বাতাস হাল্কা হয়ে এলো। ঘরের কোণ থেকে ভেসে আসছে মন জাগানো সুর। শুয়োর, কুকুর সামলানো মেঠো কাকা অন্ধকারে ভূতের মতো বসে আছেন। চুপচাপ। বিড়ি টেনেই চলেছেন। কুকুরের চিৎকার, শুয়োরের পাঁক ঘাটার শব্দ আর পাখির ডাক ছাড়া কোনো সুর শোনেননি। আড়ে আড়ে দেখছি, যাযাবর বুড়ো সুরের গভীরে ডুবে যাচ্ছেন। হাতের আঙুলে উঠে আসছে মধ্যরাতের ছন্দ। টানতে ভুলে যাওয়া বিড়ি আঙুলের ফাঁকে পুড়তে পুড়তে থেমে আছে। 

গান শেষ হলো। সুরগ্রস্থ কাকা দাঁড়িয়ে গেলেন। কিছুক্ষণ চুপচাপ। মন্থর পায়ে চলতে শুরু করলেন। বলে উঠলেন -হতভাগি, মরার সময় খুব কষ্ট পেয়েছে। কতো শেয়াল শকুনে টেনে ছিঁড়ে খেয়েছে তার ইয়াত্তা নেই। কষ্ট হচ্ছে। আহ, খুব কষ্ট হচ্ছে।

হঠাত্‍ লজ্জা পেয়ে বিড়বিড় করে উঠলেল -অসময়ে বেয়াড়া মেয়েটার কথা কেনো যে মনে পড়ে যায়! কেনো যে চোখের জল লজ্জা মানে না!!

সাধন দাস।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *