
রবি আড্ডায় সাধন দাস
বাবা মেরেছে। মার ব্লাউজ ছিঁড়ে গেছে।
মা বললো- চুপ। কাউকে বলবি না। একটা সূঁচ কিনে আন।
ঠাকুমা পেছনের ঘর থেকে বললো- রাতে কেউ সূঁচ বিক্রি করে না।
সামনের ঘর থেকে দিদি বললো- ননী খাঁ করে। যা ভাই, পাবি।
লম্ফের আলোয় ঝুলকালি পড়া আদ্যিকালের দোকান। ননী খাঁ গ্যাঁট হয়ে বসে থাকে টাটে। মালকোঁচা মেরে পরা ধুতি। তেলচিটচিটে খালি গা। ভুষোকালি রঙ। পেটে ভাঁজ পড়া ভুঁড়ি। মন্দিরের চূড়োর মতো- পেট বুক ঘাড় সরু হতে হতে গলার টংয়ে মুণ্ডু বসানো। যেনো পাথরের মূর্তি। কখন খায়, কোথায় ঘুমায়, কেউ জানে না। মাঝরাতে ডাকলেও সাড়া দেয়। ডাব্বা হাতার ডাণ্ডিতে লম্বা লাঠি বাঁধা। দূর থেকে হাতায় মাল দেয়, পয়সা নেয়। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। দোকান কল্পতরু। হেনো জিনিস নেই পাওয়া যায় না।
পেছনে বলি ননী খাঁ, সামনে জ্যাঠা। কানে কম শোনে। চেঁচিয়ে বললাম- জ্যাঠা সূঁচ হবে?
জ্যাঠা মুখ ঢেকে ফিসফিস করে, আসলে এতো জোরে বললো, ধ্বনি প্রতিধ্বনি হলো– চাইতে হয়। পাওয়া যাবে কিনা জিজ্ঞেস করতে নেই। দোকানের অমঙ্গল হয়।
- একটা সূঁচ দাও।
দুটো লম্ফ। একটা ক্যাশ বাক্সের সামনে ঠাঁই বসানো। আরেকটা হাতের নাগালে। সরিয়ে নড়িয়ে তাকের নিচে বসালো। লম্বা হাতার মাথা দিয়ে উপরের একটা ছোটো টিনের বাক্সে টোকা মারতেই নিচে পড়ে যাচ্ছিলো… জ্যাঠা ডাব্বা বাড়িয়ে লুফে নিলো। - আসন বোনা? না, ক্যাঁথা সিঙোনো?
– মা বেলুজ সিলাই করবে। - ছিঁড়ে গেছে? না হাতা, কোমর মারবে?
– ছিঁড়ে গেছে। - কে ছিঁড়েছে?
– বাবা। - কেনো?
– মা বলতে মানা করেছে।
সূঁচ হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম- দেখতে পাও না। রাতে সূঁচ বেচো কেনো? - কে বললো, দেখতে পাই না?
- চাইলাম একটা। দিয়েছো দুটো।
- লাগবে তাই দিয়েছি।
- লাগবে কেনো?
– সূঁচের ফুটো দিয়ে রাতের অন্ধকারে তোদের সংসার দেখতে পাই। বাবাকে বলবি জ্যাঠা মদ খেতে বারণ করেছে।