রবি আড্ডায় সাধন দাস
খেয়ালে রাখিবেন, ১৯৮২। ঠোঁট টিপিয়া হাসিবেন না। পিছনেও দেখিতে পাই। গরিবের ঘোড়া রোগ হইলেই তাঁহারা হানিমুনে যায়। বাপকাকাদের আমলে ইহার চাষ ছিলো না। তাঁহারা ভালো ছিলেন। বনগাঁয়ে লজ্জা তখনও নব বিবাহিতদের আড়াল শিরোমণি। হানিমুন বলিতে পারি নাই। ভ্রমণের কথা শুনিয়া বাবা বলিলেন- অফিস যখন পয়সা দিবে, খোকা, আমি যামু।
মা কইলেন- মেয়েডা কচি। পোলাপান দুডা তেমন সেয়ানা হয় নাই। একা ছাড়ুম না।
চারজন গিয়েছিলাম হানিমুনে। উঁহু, হাসবেন না।
হিন্দু মুসলমান মিলে আমাদের পাড়া। ক্লাশ সেভেনেই এবাদৎকাকা আমার মাথা মুড়িয়ে ঘোল ঢেলে মোঘল সাম্রাজ্য বিস্তার করে রেখেছেন। চোখের পানিপথে অনেক লড়াই করে পছন্দের রূপাকে জিতেছি। ইচ্ছে, হানিমুনে দিল্লির লালকেল্লায় বসে আগ্রার তাজমহল দেখি। লজ্জায়
– চলো দিল্লি চলো,
বলতে পারলাম না। হিল্লি দিল্লিতে মা বাবার মন ভরবে না। বাবা স্বর্গ জয় করতে চান।
– গয়া কাশি বৃন্দাবন ঘুইরা আইলে হয় না, খোকা?
রূপা আমি ষড়যন্ত্র কষে বললাম- হ্যাঁ হ্যাঁ, মথুরা থেকে দিল্লি হয়ে হরিদ্বারও ঘুরে আসবো।
বাবা খুশি। দুই হাত কপালে তুলে মা বললেন- দুগ্গা দুগ্গা।
গিনেজ বুক অফ ওয়ার্লডে খবরটা পাঠালে ছেপে দিতো, একমাস ধরে হনিমুন। উঁহু, হাসবেন না।
খোকার খরচের হাত বড্ড লম্বা। দিল্লি নেমে, শস্তা দেখে দুটো রিক্সা নিলেন বাবা। মাইয়া মানুষ সঙ্গে থাকলে বিটাগো খরচের বাই মাথায় চড়ে। অতএব মা আর রূপা। বাবা আর আমি। গুড বয় এ্যাণ্ড গুড গার্ল। রিক্সা চড়ে চলেছে হানিমুনে।
রিক্সা চলেছে তো চলেছেই। বাবার নজর এড়িয়ে দেখছি, লালকেল্লাটা কোথায়? যদি জানলাটা দেখা যেতো! সাজাহান পালঙ্কে আধোশোয়া। গায়ে অর্ধেক টানা র্যাপার। অতৃপ্ত চোখে তাকিয়ে আছেন। দূরে আধো ঢাকা মেঘে পূর্ণিমার চাঁদ। জ্যোস্নায় ভেসে যাচ্ছে যমুনা। তীরে মমতাজের মতো ফর্সা তাজমহল। হানিমুন যাত্রায় অবন ঠাকুরের ‘লাস্ট ডেজ অব শাহজাহান’ মনে পড়ে গেলো। রিক্সা চলছে তো চলছেই।
মা চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলেন- আর কত্দূর রে খোকা? দিল্লি ছাড়ায়ে অন্যহানে যাচ্ছি নাতো?
রূপার ঘোমটা খুলে পড়েছে। মাথায় কোঁকড়ানো চুলের ডালি। কালো গোলাপ তোড়ার মতো ফুটে আছে। মুখের চেয়ে পিছন কম সুন্দর নয়। স্প্রিং চুল, লতার আঁকশি, ভুরি ভুরি বাতাসে উড়ছে। হঠাৎ রিক্সাওলার উপর বাবা খেপে উঠলেন- খাঁড়িয়ে। একদম চুপচাপ দাঁড় হো কে যাইয়ে। কাঁহা লে যাতা হ্যায়, এ্যাঁ! বুরবাক সামঝা?
সাজাহানের ঘোর কেটে দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলাম। ছোটকা পইপই বলেছিলো- দিল্লি, মন্ত্রী এমপি আর চোর ছ্যাঁচোড়দের শহর। সাবধান। যে কোনো মুহূর্তে পকেটে ঢুকিয়ে দেখবি হাত তলা ফুঁড়ে নেমেই যাচ্ছে।
তাই তো! প্রায় আধ ঘন্টা চলছি। যতোখানি বাবার হুঙ্কার শুনে তার চেয়ে বেশি জিরিয়ে নেওয়ার জন্যে রিক্সাওলা দু’জন দাঁড়িয়ে গেছে। নেমে এক দোকানিকে জিজ্ঞেস করলাম- কালীবাড়ি ক’দ্দুর?
– ছিঃ ছিঃ! রিক্সায় যাচ্ছেন? সে এখনও অনেক দূর।
রিক্সাওয়ালারা এগলি সেগলি ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলো। আমার তো ভালোই লাগছিলো। মা হাঁউমাঁউ করে চেঁচাচ্ছেন। শুনে ভদ্রলোক ওদের দু’জনকে ধমকে, আমাদের একটা অটোয় তুলে দিলেন। হোক অফিসের, পয়সা ডাবল খর্চা হয়ে গেলো, বাবা গজগজ করছেন। মা ভয়ে অস্থির। রূপাকে প্রায় আঁচলে মুড়ে ফেলেছেন। আমরা নাকি সাংঘাতিক ডাকাতের পাল্লায় পড়েছিলাম! ডেরায় তুলে নিয়ে যাচ্ছিলো।
– খুব বাঁচান বাঁইচ্চা গেছি গিয়া। ভাগ্যিস, উনি ধমকাইলেন! দুগ্গা দুগ্গা।
সাজাহানের ছবিখানা ভেঙে খানচুর হয়ে গেলো। হুশ করে পৌঁছে গেলাম।
কালীবাড়ির ম্যানেজার বললেন- দেরি করে এসেছেন। বুকিং ক্যান্সেল হয়ে গেছে।
বিনি এ্যাডভান্সে, চরণে শত কোটি প্রণাম নিবেদন মিদং, একখানা পোস্টকার্ডে বুকিং। সত্যিই, বৃন্দাবনে একদিন দেরি হয়ে গেছে। যমুনার বস্ত্রহরণ ঘাটে আধমরা তমালগাছ দেখে, বাবা আপ্লুত। কে জানে, কোন শ্রীকৃষ্ণের চরণ ছোঁয়া মরাখুঁটো গুঁড়িটা কতক্ষণ জড়িয়ে ছিলেন! মথুরা যাওয়ার গাড়িটা আমরা ফেল করেছিলাম।
সন্ধ্যে নেমে গেছে। ডাকাত গুণ্ডার দেশ। রিক্সাওয়ালারা যে ভয় দেখিয়েছিলো, মা ছেলেমানুষ খোকাকে দিল্লির পথে আর একা ছাড়বেন না। অগত্যা বাবা আর আমি বেরিয়ে পড়লাম নতুন আস্তানার খোঁজে। পাশেই বহুকালের পুরোনো লক্ষীনারায়ন মন্দির দেখে বাবা গটগট করে ঢুকে পড়লেন। প্রায় চেঁচিয়ে উঠলাম- বাবা, এটা মন্দির। এখন হোটেল খুঁজতে হবে।
কে শোনে কার কথা! আমি পিছনে। (পিছনে থাকলেই বাবা খুশি হন।) দেবমূর্তি আর পুরোহিতের সামনে গড় হয়ে লম্বা প্রণাম ঠুকে, প্রণামি দিয়ে, অনেকক্ষণ হিন্দিতে গল্প করে পুরোহিতের নিজের থাকার ঘরখানা বাবা ম্যানেজ করে ফেললেন। পুরোহিত বাঙালি। হাসলেন। বললেন, কোনো ভয় নেই। তিনি মন্দিরেই থাকবেন। ডাকলেই তাঁকে পাওয়া যাবে। বহুকালের পুরনো গোল গম্বুজ ছাদের বিশাল ঘর। ভ্যাপসা গন্ধ। ঝুল পড়া টিমটিমে বাল্ব। ঘরের শেষ দেখা যায় না। বাবা বুক ঝেড়ে লম্বা শ্বাস নিয়ে বললেন- আহ, কী খোলা মেলা। খোকার মা, বিছানাটা ঝাইড়া দাও।
আমি চোখে অন্ধকারের পর অন্ধকার দেখছি। একটাই বিছানা। বাবা বললেন- হোউক। খর্চাতো কম হইলো।
মা আমাকে বললেন- খোকা, তুই একা আইলে এমন লক্ষ্মী-নারায়নের ঠাঁই যোগাড় করতে পারতস? ভাগ্গিস বাপকে পাঠাইছিলাম। দুগ্গা দুগ্গা।
রূপা মার পাশে পুটুলি পাকিয়ে শুয়ে। আমি একবার উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলাম। বাবা ধমকে উঠলেন। – উফ, ইতনা উশখুশ করতা কিঁউ!
হানিমুনের গল্পটা এখানেই শেষ।
আগ্রায় পৌঁছে গেছি। হোটেলের ছাদ থেকে দেখা যায়, তাজমহলের অবয়ব। পোড়া দেশে শাহজাহান নেহাৎ বানিয়েছিলেন। মোচলমানদের কবরখানা ছাড়া তো কিছু না! বুঝিয়ে সুজিয়ে বাবাকে (তখনকার দিনে ‘ফিট করলাম’ বলা মানে গুরুজনকে অপমান করা, বলা দূরে থাক, ভাবাও অপরাধ ছিলো।) রাজি করালাম, চাঁদিনি রাতে তাজমহল দেখতে হয়। গনেগন, সেদিন পূর্ণিমা। চিঁড়ে মুড়ি বেঁধে চারজন বিকেলবিকেল নাগাদ বিশাল তোরণ পেরিয়ে ঢুকে পড়লাম।
বাবা মাকে বললেন- দ্যাখছো, রোজ এহানে হাটের মুতোন মানুষ জড়ো হয়, বুঝলা?
মমতাজমহল তো বিয়ের রাতেই আমার বুকের ভিতর ঢুকে বসেছিলো। ইতনাদিন বাদ মুঝে শাহজাহান শাহজাহান লাগতিছে। বাদশাহের মতো মাথা উঁচু করে লম্বা লম্বা পা ফেলে হাঁটছি। রূপার দিকে তাকিয়ে… তাকিয়ে… কতোবার মমতাজমহল ঝালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। শ্বশুরমশায় সঙ্গে। মার পাশে ঘোমটা মোড়া কলাগাছ ছাড়া কিছু দেখতে পাচ্ছিনে। পরনে একটা কচি কলাপাতা রঙের মামুলি শাড়ি। রিক্সাওয়ালাদুটো আমার সাড়েসব্বোনাশ করে দিয়ে গেছে। এই ভারতবর্ষ মার কাছে ডাকাত, বর্গির দেশ ছাড়া কিছু না। মেয়েকে কিছুতেই বোগল ছাড়া করছেন না।
বঙ্গে তখন সিপিএমি রাজত্ব। মা বলতেন, চিপিয়েন। বাঙালি যায় রঙ্গে তো চিপিয়েন যায় সঙ্গে। তাজমহলের ভিটেয় মাথা ঠেকিয়ে বৌটি যখন স্বামী, সংসারের মঙ্গল কামনা করে উঠে দাঁড়ালো কপালে সিঁদুরের বহর দেখে বুঝলাম হানিমুনে এসেছে। আর এক বঙ্গীয় জুটি। বরটি সাইজে, বয়সে আমার মতো। তবে ডাকাবুকো। বৌ নিয়ে একাই বেরিয়ে পড়েছে। বোঝাচ্ছে নাতো, শাসাচ্ছে। – বুঝলে, শাজাহান ছিলো একজন বদমায়েস শোষক সম্রাট। বাইশ বছর ধরে কুড়ি হাজার শ্রমিকের রক্ত শোষণ করে তৈরি করেছে এই কবর। মমতাজমহলকে মোটেই ভালোবাসতো না। রূপ দেখে তুলে এনেছিলো ভোগ করার জন্যে। আগেও একটা বিবি ছিলো, পরেও তিনটে নিকে করেছে। মমতাজমহলের আসল নাম আরজুমান্দ বানু বেগম। বেগম মানে বুঝেছো, অন্য একজনের বৌ। ভাবতে পারো, কী রকম অত্যাচার করতো! চোদ্দ নম্বর বাচ্চা হওয়ার সময় মমতাজমহল যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে মারা যায়। কেমন নির্লজ্জ! মারা যাওয়ার পরপরই মরা বিবির বোনকে আবার শাদি করে। অথচ নিজের মেয়ে জাহানারার সামনে তাঁর প্রেমিককে তক্তা ঠেসে দেওয়ালের সাথে আটকে, পেরেক গেঁথে গেঁথে খুন করেছে। আসলে লোকটা হিংস্র, নিষ্ঠুর, জানোয়ার। তখন যদি সিপিএম থাকতোনা, দেখিয়ে দিতো…
এমন মানুষের পাশে হাঁটতে বাবাও নারাজ। তাজমহলটা চটকে পোড়া শাকচুন্নীর মুখ বানিয়ে ছেড়েছে। আর হাঁটলে শাকচুন্নির শ্রাদ্ধ বানিয়ে দেবে। বাবার পেছন পেছন এগিয়ে গেলাম।
– পারস্য, তুরস্ক, ভারতীয়, স্থাপত্য শিল্পের সম্মিলনে তৈরি নিঁখুত তাজমহল। চাঁদিনি রাতে স্বর্গ নেমে আসে এখানে।
পাশে দাঁড়িয়ে গেলাম। ভদ্রলোক প্রায় পঞ্চাশের কোঠায়। লম্বা, বলিষ্ঠ চেহারা। কমনীয় হাসি ভরা মুখ। মিষ্ট ভাষী। কাঁধে ঝোলা। উঁকি মারছে, ব্রাশ, লম্বা তুলির ডাঁটি। গোল পাকানো হ্যাণ্ডমেড পেপারের রাউণ্ড। পাশ ঘেঁষে বসে আছে এক নরম যুবতি, অসাধারন সুন্দরী। মেয়েই হবে, তাকে বোঝাচ্ছিলেন।
আমাদের বললেন- হ্যাঁ, হ্যাঁ বসুন। এখান থেকেই সবচেয়ে সুন্দর চাঁদ ওঠা দেখতে পাবেন।
আমরা বসে পড়লাম। মেয়েটি একান্ত অনুগত। আরো নিবিড় মনযোগী হয়ে আরো একটু এগিয়ে বাবার কোল ঘেঁষে বসলো- হ্যাঁ, স্যর বলুন, যা বলছিলেন।
বুঝলাম, ভদ্রলোক বাবা নন, স্যর।
আমরা দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে গম্বুজের নিচে বসে ছিলাম। বাবা গম্বুজের গায়ে হাত বোলাচ্ছিলেন। তাঁর চোখ বন্ধ। মুখে মর্তের অনির্বচনীয় স্বর্গসুখের এক অভিব্যক্তি। স্যর তাকিয়ে ছিলেন বাবার দিকে- বললেন, ‘তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখেছো কি তাঁর প্রাণ? / ভিতরে তাহার মমতাজ নারী, বাহিরে শাহজাহান।’
অপূর্ব মুগ্ধকর কণ্ঠস্বর।
মা বললেন- খোকা চিঁড়াগুলান ভিজাই নে আয়। এরপর সময় পাবিনানে।
স্যর বলছেন- এই গম্বুজ পুরুষের প্রতিভূ। ভোরে সূর্য ওঠার সময় গোলাপি আভার বিচ্ছুরণ ঘটায়। গোধুলিতে রঙে রঙে মুখরিত হয়ে সাত রঙ ছড়ায়। বাবা আসলে পুবের গম্বুজে তাকিয়ে রঙের খেলা দেখছিলেন। আমরা আশ্চর্য হয়ে সেই দিকে তাকালাম। তাজমহলের চাতালে গম্বুজের রঙ দেখার স্তব্ধতা ছড়িয়ে পড়েছে। স্যর বলে চলেছেন- জ্যোৎস্নায় মুক্তোর মতো চকচক করে। সোনালি মেশা নীল আলোয় লুকোচুরি খেলে। কুয়াশা মাখা দিনে স্তম্ভেরা মেঘের গায়ে বকেরমতো ভেসে বেড়ায়। প্রতি মুহূর্তে যে রঙ বে-রঙের বিচ্ছুরণ ঘটায়, তা নারীর রূপ, প্রকৃতি আর হৃদয়ের বিস্ময়কর প্রকাশ। স্যর আবেশ তৈরি করা উচ্চারণে বলে চলেছেন, আর আমাদের স্বপ্নে চাঁদের রূপালি আলোর রাত নেমে আসছে।
চিঁড়ে ভেজাতে যাওয়ার পথে দেখলাম, আমাদের পাশে রেডি হয়ে আছে ক্যানভাস, ইজেল। ছবি আঁকার উপকরণ।
পুবের মাঠে রূপোর থালার মতো চাঁদ উঁকি দিলো। রূপার গায়ে মা চুপিচুপি ঠেলা দিয়া ফিসফিস কইরা কইলেন- এই ছুঁড়ি যা। খোকার লগে গিয়া বস। এহানে তো লোকলজ্জা নাই। অতো ঘোমটা দেওনে কাম কী? দেখছস না, চাঁদ উঠত্যাছে।
মা নিজে একটু বাবার দিকে এগিয়ে বসলেন।
সামনের সবুজ গাছটা তখন গাঢ় আবেগময় সবুজ হয়ে এসেছে। অন্ধকারের আভাস। মায়ের ইংগিতময় ঠেলায় রূপার হেঁট ঘাড়, আরো হেঁট, মুখ লাল। সবুজের পটে তখন খুলেছে ডুবন্ত গোধুলির ডালি। সূর্য ডুবে গেছে। আকাশ জুড়ে সূর্যাস্তের আভা। রূপার লজ্জার রঙে নতুন বৌয়ের মতো সেজেছে আকাশ। ওকে লজ্জা পাওয়ার হাত থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। এতো মানুষের সমাবর্তনে একা নিসঙ্গ আকাশ আর রূপা। নিশ্চুপ অপেক্ষায়, পথ চেয়ে আছে। পূর্ণিমার চাঁদ উঠবে। জ্যোৎস্না ঝরবে। ঘোমটায় আরো একটু আড়াল টেনেছে সে। সামনে ঝুঁকে উঁচু হাঁটুর চূড়ায় থুতনি রেখেছে। চেয়ে আছে পুবের আকাশে। এলোমেলো শাড়ি ছড়িয়ে আছে ওর চারপাশ জুড়ে। আঁচলে, কুঁচিতে হাওয়াই এলোমেলো শাড়ির ভাঁজে ভাঁজে ফুটে উঠেছে তাজমহলের গায়ে না-আঁকা আলপনার শ্রেষ্ঠতম কলকাসমূহ। তাজমহলের ভিতরে, আরো ভিতরে, আরো ভিতরে আমার মমতাজমহল। লজ্জা, লজ্জা, লজ্জা। উদাস হওয়ার ভান করছি। বোকা, হাঁদা, গঙ্গারাম, আমি আরো আরো গর্দভের মতো অনেক কিছু…… মমতাজমহলের কবরের দিকে তাকিয়ে তন্ময়।
শিল্পী যুবতিকে বললেন- ‘লাস্ট নাইট এ্যাট আগ্রা’ নামে একটা ছবি আঁকবো। বি রেডি।
শিল্পীর আরও কোল ঘেঁষে এগিয়ে মেয়েটি হাসকি গলায় বললো- ‘লাস্ট ডেজ অব শাহজাহান, মনে পড়ছে, স্যর।
মা মেয়েটিকে বললেন- হ’ মা জননী, যাও যাও, এগোয় যাও। এহন লগে লগে বইতে হয়। চাঁদ উঠত্যাছে।
বাবা আরো একটু মা’র দিকে এগিয়ে বসলেন।