রবি আড্ডায় সবুজ সেন
মেয়েটি চলে যাচ্ছে ।
ছেলেটার উচিৎ মেয়েটিকে আটকানো , কিন্তু তার মধ্যে কোনও ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না
অষ্টমীর জমজমাট সন্ধ্যে । এখন সময় আটটা দশ । বাড়ির পাশেই বিরাট পূজা হচ্ছে , মাইকে গান হচ্ছে , ঢাকও বাজছে । রাস্তায় মানুষের ঢল । চারিদিকে বিরাজ করছে এক সর্বজনীন আনন্দ ।
একটি বাড়ির পরিবেশ একটু অন্যরকম ।
সেই বাড়িতে একটি মেয়ে তার স্বামীর দিকে জলভরা চোখে তাকিয়ে আছে । সেই তাকিয়ে থাকার একটা নাম রয়েছে , তার নাম থমথমে দৃষ্টি ।
মেয়েটির স্বামী কিন্তু তার দিকে তাকিয়ে নেই । সে জানালার সামনে দাঁড়িয়ে একটা সিগারেট ধরিয়ে অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে ।
মেয়েটি বলল , তুমি এই কথাটা আমাকে বলতে পারলে ????!!!!
মেয়েটির স্বামী বলল , বলতে যে পারলাম সে তো তুমি শুনতেই পেয়েছ ।
মেয়েটি আরও একটুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর আলমারি খুলে তার শাড়ি কাপড় জামা বের করতে লাগল । এই প্রস্তুতির নাম বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি ।
ব্যাগে কাপড় জামা ভর্তি করার পর মেয়েটি বলল , আমি চললাম । তোমার সাথে কোন মানুষ থাকতে পারে না । তুমি একটা স্বার্থপর ।
ছেলেটা তার হাতের সিগারেটটি জানলা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়ে বলল , কোথায় আর যাবে…তোমার দৌড় তো তোমার বাপের বাড়ি পর্যন্তই ।
মেয়েটি রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে চিৎকার করে বলল , না…আমি বাপের বাড়ি যাব না । আমার দুই চোখ যেদিকে যায় আমি সেদিকেই চলে যাব ।
মেয়েটি চলে যাচ্ছে ।
ছেলেটার উচিৎ মেয়েটিকে আঁটকানো , কিন্তু তার মধ্যে কোনও ব্যস্ততা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না ।
মেয়েটি দরজা খুলে বাইরে বের হতে গিয়েও বের হতে পারলো না । তার দুই চোখ তখন আর তাকে কোনও দিকেই নিয়ে যেতে পারছে না ।
হঠাৎ করে পাড়া জুড়ে লোডশেডিং হয়ে গিয়েছে । পুরো পাড়া অন্ধকার । পূজামণ্ডপের গান এখন বন্ধ । অন্ধকারে কোনও দিকেই কিছু দেখা যায় না । মেয়েটি তাই কাঁদতে কাঁদতে দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে আছে । তার হাতে ধরা রয়েছে বাড়ি ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য যেমন তেমন করে গোছানো একটি অগোছালো ব্যাগ ।
এবার ছেলেটার হাসি শোনা গেল , হা হা হাসি । সে হাসছে ।
মেয়েটির মনে হচ্ছে এটা উপহাসের হাসি । সে আর পারলো না , এতক্ষণ ধরে চেপে রাখা চোখের জল তার চোখ দিয়ে বমির মত হড়হড় করে বেরিয়ে এল ।
এবার একটা কিছু ভাঙার শব্দ শোনা গেল । মনে হচ্ছে এটা টেবিলে রাখা চিনামাটির ফুলদানিটা পড়ে ভাঙল । এরপর একটা ঢুপ করে শব্দ পাওয়া গেল ,মনে হল কেউ যেন খাটের সাথে খুব জোর একটা গুঁতো খেল ।
এরপর যেটা পাওয়া গেল সেটা হল স্পর্শ ।
ছেলেটা অনুমানে হাতড়ে হাতড়ে মেয়েটার কাছে পৌঁছে গিয়েছে । সে গিয়ে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরেছে । এই জড়িয়ে ধরার মধ্যে একটা দাবীমাখা অধিকার আছে । সেই দাবী বলছে , না তুমি কোত্থাও যাবে না ।
মেয়েটি এইবার দ্বিগুণ অভিমানে আরও জোরে কাঁদতে লাগল , আর ছেলেটাও পাল্লা দিয়ে তার হাসি ।
এমন সময় আলো ফিরে এল । পাড়ার পূজামণ্ডপে আবার গানবাজনা শুরু হয়ে গিয়েছে । চারিদিকে আবার হইহই আনন্দ ।
কিন্তু কোন আশ্চর্য কারনবশতঃ এই বাড়িটাতে আলো এল না , সেই কারনে সেই বাড়িতে তৈরি হল আলোআঁধারি হাসি-কান্নার এক রহস্যময় পরিবেশ ।
হাসি এবং কান্না দুজনেই ভাবল , এই বেশ হয়েছে ।