রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ

আজ অশ্রুকুমার সিকদার। আত্মজীবনী –‘পুরোনো পথের রেখা’।

অশ্রুকুমার বাবুর সব লেখা পড়ি। পড়ার চেষ্টা করি। সব লেখকের বই যেমন পড়িনা তেমনি এক একজন লেখকের সব বই পড়ার চেষ্টা করি। সংগ্রহ করি। অশ্রুবাবু তেমন একজন।

২০১৮ সালে এ বই পড়ার ইচ্ছা হয়েছিল। আগেই বলেছি আত্মজীবনী আমার প্রিয়। অধ্যাপকের আত্মজীবনী হলে তো আরও প্রিয়। কিন্তু খুঁজে আর পাইনা ‘পুরোনো পথের রেখা’। অশ্রুবাবুর গদ্য সংগ্রহ নিয়ে মধুময় বাবু একদিন ফেসবুকে কিছু লিখেছিলেন। মধুময় বাবুর কাছেই জিজ্ঞেস করলাম – এ বই কোথায় পাব। উনি বললেন –গদ্য সংগ্রহের পঞ্চম খণ্ড ছাপা হচ্ছে সেখানে পাবে। প্রকাশ হলে সংগ্রহ করলাম।

তথ্য হিসেবে জানানো যেতে পারে ‘পুরোনো পথের রেখা’, ‘ভাঙা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য’ ও ‘আধুনিকতা ও বাংলা উপন্যাস’ গ্রন্থের কিছু প্রবন্ধ নিয়ে এ গদ্যসংগ্রহ। ভূমিকায় বলা হয়েছে –“এই খণ্ডের প্রথম চারটি লেখা ‘এক কুড়ি পছন্দের প্রবন্ধ’ থেকে নেওয়া।“ যদিও সেগুলি আগেই মুদ্রিত হয়েছিল। যেমন ‘আধুনিকতা ও বাংলা উপন্যাস’ থেকে তিনটি প্রবন্ধ নেওয়া। ‘আধুনিকতা ও বাংলা উপন্যাস’ ( অরুণা প্রকাশনী ), ‘ভাঙা বাংলা ও বাংলা সাহিত্য’ (দে’জ ) আগেই পড়া থাকায় ২০১৯ সালে গদ্যসংগ্রহ( পঞ্চম খণ্ড ) খুলেই ‘পুরোনো পথের রেখা’ পড়েছি।

জন্ম, শৈশব, শিক্ষাজীবন, রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া, সেখানে থেকে বেরিয়ে আবার বৃহত্তর জীবনে প্রবেশ, কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন, বন্ধুদের স্মৃতিচারণা, পারিবারিক জীবন, ওপার বাংলায় ভ্রমণ, ছোটবেলায় ওপারে নিজের পিতৃভূমির সন্ধান, বইয়ের মধ্যে ডুবে থাকা, মাস্টারমশাইদের কথা নিয়ে এ গ্রন্থ। এসেছে দেশভাগের প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা লাভ। প্রিয় বন্ধু শঙ্খ ঘোষকে নিয়ে লেখেন –‘শঙ্খ-কে, জন্মদিনে’। আবার আছে সাধারণ মানুষ ‘আমাদের মন্টুদা’ (রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস ) এর কথা। স্মৃতিতে জমে থাকা নানা ছবি, যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে এ গ্রন্থ।

আমরা যখন রাজনীতি বিমুখ, রাজনীতিকে ঘৃণা করি, রাজনীতি নিয়ে নিরপেক্ষতার ভান করে চুপ করে বসে থাকি অথচ মনে মনে একপক্ষকে সমর্থন করি তখন এত বড় অধ্যাপক যৌবনে নিজেও রাজনীতিতে জড়িয়ে গিয়েছিলেন। শোনা যাক সে কথা –“যার মঞ্চে আবৃত্তি করতে উঠলে পা কাঁপত, সে কিন্তু পরে রাজনৈতিক বক্তৃতা দিতে অকুতোভয় হয়ে উঠেছিল। নবম-দশম শ্রেণিতে পড়বার সময় সে হয়ে ওঠে এই এলাকার প্রধান ছাত্রনেতা ! ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট ছাত্র-প্রতিনিধি হিসাবে এই উদীয়মান নেতাকেই বক্তৃতা দিতে বলা হয় তিলক ময়দানে। তাদের ছাত্র কংগ্রেসের দপ্তর ছিল টিনের একটা দোতলার ঘরে, যে দোতলায় উঠতে হত আলু-পেঁয়াজের বস্তার উপর দিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে প্রায়। অন্য সদসভদের মধ্যে ছিল বিধান, গৌরীশংকর প্রসাদ ও পরবর্তীকালে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি আনন্দময় ভট্টাচার্য। স্বাধীনতার আগে শিলিগুড়ির এক পাটগুদামে সারা উত্তর বাংলার এক ছাত্রসমাবেশ হয়। অনেক ছাত্র রাজশাহী, বগুড়া, নীলফামারি, রংপুর থেকে আসে এই সমাবেশে যোগ দিতে। সে ছিল অভ্যর্থনা সমিতির সম্পাদক। পনেরো বছরও তখন তার পূর্ণ হয়নি, কিন্তু নিজেকে তার বেশ কেউকেটা মনে হত।“

প্রকাশক – দীপ প্রকাশন, মূল্য -৪৫০ টাকা।

বিশেষ আত্মপ্রচার হিসেবে জানানো যেতে পারে যে উত্তরের স্মৃতিকথা ও আত্মকথায় দেশভাগ নিয়ে এক লেখায় ‘পুরোনো পথের রেখা’ নিয়ে আলোচনা করেছি। ইচ্ছা হলে সে লেখা পড়া যেতে পারে।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *