রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ
প্রচলিত গল্পপাঠের সঙ্গে উপলের গল্প মেলে না। তিনি সচেতনভাবেই দূরে চলে যান। কাহিনির বদলে তিনি একটা কথাজাল নির্মাণ করে যান। একাধিক বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সংযোগ করে একটা সূত্রমালা গড়ে তোলেন। জীবনের সঙ্গে সংযুক্ত একাধিক নথিনামা এনে জীবনকে নানা কৌণিক বিন্দু থেকে বিশ্লেষণ করে দেখান সত্য এমন। সেখানে গল্প শোনানোর কোনো রেওয়াজ নেই। ফলস্বরূপ দ্রুত দৃশ্যপট বদলে যায়। একাধিক খণ্ড সত্যকে সূত্রবদ্ধ করে তিনি একটি বৃহৎ সত্য নির্মাণ করেন। সবটাই জীবনের অঙ্গ। জটিল জীবনের ব্যাধিকে ভিন্ন ভিন্ন মেরুকরণে বিভাজন করতে গেলে বৃহৎ উপন্যাস হয়ে যাবে। তারবদলে তিনি ক্ষণিক উদ্ভাসনেই জীবনের বিপ্রতীপ সত্যকে দেখাতে চান। ফলস্বরূপ ছিন্ন সূত্র, সত্যের খণ্ড অংশ, বহমান সময়ের খণ্ড দলিল, জীবনের হরেক রকম ছাঁচ ও মানুষের বিবিধ প্রবৃত্তি নিয়ে চলমান গদ্যমন্থনে একটা আলেখ্য নির্মাণ করে দেন। যেন একটা সংগীতের প্রয়াস। পুরোটা মিলেই গান। বিচ্ছিন্ন করলে কোনো সত্য মিলবে না। বিপ্লব, মধ্যবিত্ত জীবন, অর্থ, ব্যবসা, রুচি, রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, শ্রেণিশত্রু নিধন, বিজ্ঞাপন, বাজার ধরার টেকনিক, মানুষকে প্রতারণা করার নব্য প্রয়াস, বিপ্লবের মহৎ প্রয়াস নিয়ে নিজেকে নির্মাণ করা বিমলের চেতনাহীনতা, সংসার, সব গুছিয়ে নেওয়া, ফাঁকি, সাপ লুডোর খেলা, চড়াই উতরাইয়ের আরোগ্য ব্যাধি, চালমাত সব মিলিয়ে সময়ের জায়মান সত্যকে তিনি যে ভঙ্গীতে ‘হরপ্পার অজানা শিলালিপি’ গল্পে জানান দেন তা ভয়ানক সুন্দর। হ্যাঁ ভঙ্গিটাই উপলের গল্প। গল্প বলা, উপস্থাপনের চলমানতা ও একাধিক বয়াননামা এনে একটি সারোৎসার সত্য আবিষ্কার। আজও আমাদের পাঠকের গল্পে কাহিনি খোঁজার অভ্যাস যায়নি তাই উপলরা বেশি সংখ্যক পাঠকের কাছে পৌঁছতে পারেন না। অথচ সচেতন বীক্ষণে বাংলা গল্পকে আধুনিক করে চলেছেন।