রবি আড্ডায় ভাস্কর চৌধুরী
অনেক দিনের পরে এই যে উঠোন
আসবে বলে সাজিয়ে রাখি
সাজানোটা এতোই সহজ ?
সহজ তো নয় ,
যে মেয়েটি আসবে বলে এতো কথা
সবার আগে তাকে সাজাই শব্দ এবং পাতা দিয়ে
একপাতা বই খুলে আমি বসে আছি
যত্রতত্র শব্দ আছে , তারই মাঝে শব্দ খুঁজি
অলখ থেকে বলছে কেবা , পাখির মতো
শব্দ নেবে ?
ভোর সকালে শিশিরপাতে শুনতে এসো
ভালো লাগলে একটা নিও ।
পাখির কাছে নদীর কাছে শব্দ যেচে
ফুলের কাছে চোখের মতো শব্দ খুঁজে
যাচ্ছে চলে কয়েকটা মাস ।
এলোমেলো শব্দগুলোর কি উচ্ছাস !
একটি নারী তিলে তিলে তিলোত্তমা গড়বে ওঠে
খড়ে বাঁশে কাদায় মেখে দুর্গা যেমন রূপ প্রকাশে
এমন করেই শব্দ এনে বসে আছি আকুল হয়ে ।
.
মেঘ টানানো দড়ি তো নেই , মেয়েটিকে গড়তে গিয়ে একটা ভালো আড়াল লাগে
যেমন আড়াল মায়ের পেটে ছেলে মেয়ে বেড়ে ওঠে
মেঘ দিয়ে তাই ঘিরে নিলাম
যেথায় তাকে গড়ছি এখন
অরণ্য আর পাখ পাখালি ,
পদ্মরেণু , বাঁশের বাঁশি সুর বাজালো ,
বর্ষা পেয়ে ময়ূরটা পেখম মেলে রং সাজালো
পেঁয়াজ এবং রসুন খোসা বললো এসে ,
শাড়ির রঙে কাজে লাগলে মিলিয়ে দিও ।
এমন করে আমার উঠোন পূর্ণ করে
ভরে গেলো শব্দরঙে।
আমি এখন শব্দ সাজাই পা থেকে তার
ঝংকার শব্দটা ঝংকারিলে
তাকেই আমি পায়ে নিলাম
ফুলের রঙে পাথর সোনা
পায়েল হলো ।
পা থেকে গা উঠতে গিয়ে অবাক হয়ে দেখি তাকে
পায়ের উপর উরুসন্ধি ঠিকই আছে
একটা পাতা , পানের পাতা রেখে দিলাম হাতের কাছে
লালচে কিছু এঁটেল মাটি লাগছে এখন
কোমর এবং আশে পাশে
পলকা নামের একটা দড়ি নেমে এসে বললো কখন , কোমরটাকে বেঁধে রাখো
সাপের ফনার চাকচিক্য
উঁচু হয়ে উঠে গেলো বুক অবধি
বুকের ভেতর পানের পাতা পেঁয়াজ এবং পদ্মরসে ভিজিয়ে হৃদয়
বসিয়ে চলি বুকের কাছে
হালকা এবং দুলকি নামের দুটি শব্দ
বসে গেলো বুকের পাশে
বিনয় করেই বলে দিলো বিনয়
যেমন হালকা নিচু
বুকটা তেমন বসে গেলো পদ্মরাগে ।
জলেরধারা ফাগুন মাসে এসে বলে , রেখে দিও ঝিরিঝিরি শব্দটাকে ।
দাঁতের খিলান করবে কিসে ?
সাদা বকের পালক এসে পড়লো তখন দাঁতের রঙে
চিরল পাতা তেঁতুল যেমন ধীরে ধীরে গড়ে দিলো একটা চিবুক
হাতের টোকা সেই চিবুকে একটুখানি ছলকে গিয়ে বসলো তখন চিবুক মাঝে ।
গালের কি দোষ ?
হালকা টোকায় বসে গেলো দু গালে তার রক্ত আভায়
পাখির মতো গ্রীবা তুলে তাকিয়ে তখন সেই রমনী
চোখের কোনে তুলে নিলো দুটো নদী ।
চুলের ভেতর ঢুকে গেলো আঁধার এবং জোনাক পোকা
বললো এবার বানাও দেখি ভাগ্য আমার ।
পারবে তুমি গড়ে দিতে এই কপালে ?
সিঁদুর দিয়ে বলেই দিলাম , এই ভাগ্য
উঠোন ছেড়ে ঘরে চলো । ।। শুভ সকাল ।।