রবি আড্ডায় অনিন্দিতা মিত্র

সম্বোধনহীনেষু,

                        ভাটির নদীতট আর শ্মশান বোধহয় নিশ্চিতরূপে দুই সহোদরা, বিসর্জনের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা চিহ্নে হোক বা যোগাযোগহীনতায়, ভারি বাতাসে হোক বা শব্দহীনতায় একে অপরকে মনে করায়। এই দুই সহোদরাকে আজকাল পৃথিবীর পবিত্রতম স্থান বলে মনে হয়, অহেতুক শব্দক্ষেপন যেখানে নিষিদ্ধ। শব্দ তো চিরকালীন বাহুল্য; অপারগতাকে ঢাকতে, অনৃতকে ঋতপরায়ন সাজাতেই তো শব্দ খরচ হয়, না হলে শব্দের আর কাজ কী?

 শব্দ অবশ্য আরো একটা কাজ করে, অপচয়। অনাবশ্যক চপলতা, উচ্ছ্বসিত হৃদয়াবেগ প্রকাশেও বাড়াবাড়ি রকমের শব্দ খরচ হয়। আর কে না জানে বলো শব্দে প্রকাশিত আবেগ কী প্রবল অশ্লীল! উচ্ছ্বাস থিতোলে এই আবেগী উচ্চারণের ঘোষণা তাড়া করে যাবে আজীবন, চোখে আঙুল দিয়ে দেখাবে নিজের মূঢ়তা। আমার সব মূঢ়তা উজানে ভেসে গেছে, এখন তাই তীর্থ করতে এসেছি ভাটিতে। পলির চরে আটকেছে তোমার নৌকা, ফাঁকা নৌকায় বসে তর্পণ সারছি। অধীর উতলা বলে এককালে ভারি দুর্নাম ছিল আমার, আজ এ অবেলায় এসে বুঝেছি পৃথিবীতে কিছুই অনিত্য নয়, সুনাম – দুর্নাম, উজান – ভাটি কিছুই নয়। জল আবার বাড়বে, নৌকা আবার চলতে শুরু করলেই আমার তর্পণ ঠিক তখনই শেষ হবে। 

হাওয়া জানান দিচ্ছে জল বাড়ার সুনিশ্চয়তার বার্তা। চলাচলোপযোগী হলে টুপ করে নেমে যাবো জলে। বিদায় নেবো না তোমার কাছে, তাতেও অনর্থক শব্দক্ষয় হবে। শব্দকে বাহুল্য যবে থেকে মনে হয়েছে, তবে থেকে নৈঃশব্দের নেশা ধরেছে। এ নেশার হাত ধরে পরিব্রাজনের পথে যেতে যেতে হঠাৎ তোমার কথা মনে পড়লে একমুঠো খৈ রাস্তায় ছড়িয়ে দিয়ে বলবো- এ জন্মের মতো সব ঋণ শোধ করলাম।

                                                                        ইতি- 

  এক অসামঞ্জস্য রেখা

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *