রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ
গল্প লেখার সহজাত কবজকুণ্ডল নিয়েই গল্প আসরে বাজিমাত করতে এসেছেন শতদল মিত্র। এখন বিষয় হল এই সহজাত কবজকুণ্ডলটা কী বা শতদল মিত্রের গল্পে আমরা কী পেলাম। প্রত্যক্ষ সময়জ্ঞান, জীবন সম্পর্কে প্রগাঢ় অভিজ্ঞতা, জীবনকে ছিন্নভিন্ন করার দুরভিসন্ধি, লোকায়ত ধ্যানধারণা, প্রচ্ছন্ন রাজনৈতিক অভিজ্ঞান, জীবনের ঘটমান বর্তমানকে নিরপেক্ষ দেখার প্রয়াস ও জনজীবনের ভিতর দিয়ে চিরুনিতল্লাশি চালানোর দক্ষতা শতদল মিত্রকে গল্পের হেডমাস্টারে পরিণত করেছে। এখন প্রশ্ন হল শতদলের গল্প স্কুলের পাঠক কারা হবে? সাহিত্য সম্পর্কে সচেতন ও জীবনাভিজ্ঞার রসে টইটম্বুর মানুষই শতদলের গল্প আস্বাদনের নির্ভরযোগ্য আশ্রয়স্থল। সে সংখ্যা সীমিত। শুধু স্রোতের বিরুদ্ধেই নয় প্রচার, প্রসারের অভাবে গুরুত্বপূর্ণ গল্পকার চোখের আড়ালে চলে যায়। ফুটেজের অভাবে, বিগ হাউসের দৃষ্টির অভাবে তাৎপর্যপূর্ণ বীক্ষণও চাপা পরে যায়। শুধু বিগ হাউস নয় গবেষণা বা পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখককে চেনার ন্যক্কারজনক আলসেমিতে সাহিত্যের সমূহ প্রয়াস হারিয়ে যায়। তবুও লড়াইটা চালিয়ে যেতে হবে। সেই লড়াইয়ে শতদল মিত্রের একক অবস্থান। সাহিত্যের বাজার থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন শতদল নিজের আত্মসাধনায় একাই মেতে আছেন।
শতদলের আখ্যানে একটা ম্রিয়মান কণ্ঠ আছে। তা সময়ের কথাই বলছে বটে, সময়কেই আঘাত করছে বটে কিন্তু প্রবলভাবে নয়। শতদল সরাসরি আক্রমণে যান না। আলতোভাবে, জীবনসাঁচ গড়তেই গড়তেই সময়ের চাপানউতোর, বিবমিষাকে সূক্ষ্মভাবে বুনে দেন। সেটাই শতদল মিত্রের শিল্পধর্ম।
শতদল মিত্র আমার সময়ের সেই শিল্পী যিনি বহমান ঘটনাকে নানাভাবে আঁকড়ে ধরেন। সময়কে জাপটে ধরেই তিনি গল্পের উড়ান দিতে চান। আসলে তিনি সময়কেই লিপিবদ্ধ করতে চান। স্থান-কাল-পাত্রকে সামনে রেখে কিছু চরিত্র সাজিয়ে সময়ের আর্তনাদকে চিহ্নিত করতে চান। রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন, পার্টিসর্বস্বতা, ভোটকে কেন্দ্র করে হত্যা, সিন্ডিকেটরাজ, জমি মাফিয়া, আদর্শ-নীতিহীনতার দ্বন্দ্ব ও মধ্যবিত্ত বাঙালির আত্মভোগী মানসিকতাকে তিনি বুনন করে চলেন।