রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ
আজও অসাধারণ গল্প লেখা হয়। এই গল্পগ্রন্থটি দৃষ্টান্ত।
গল্পলেখা তো মেধাবী মননের পরিচয়। লেখকের অভিজ্ঞতা, রাজনৈতিক বোধ, দর্শন, আবহমানকালের পরম্পরা, সাহস, ভাষা, উপস্থাপনের কায়দা, নিজস্বতা না থাকলে তা আমার কাছে টেকে না। আমি টিকতে দেই না। হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায় অসাধারণ সব গল্প পড়ালেন এই গ্রন্থে।
লুলার যে ভাষা, প্রতিবাদের বয়ান, ক্রোধ, বিদ্রোহ তা একেবারেই নতুন। লুলার কোনো পূর্বসূরী নেই বাংলা কথাসাহিত্যে (হ্যাঁ দায়িত্ব নিয়ে বললাম)। এইরকমভাবে শ্রেণিচরিত্র, প্রলেতারিয়েত এত রুক্ষ, তীক্ষ্ণ ধারাবাহিকভাবে বিবিধ পরিসরে পুঁজিবাদ-রাষ্ট-পার্টি-কর্পোরেটকে আক্রমণ করতে পারেনি।
প্রলেতারিয়েত সমাজকে নিয়েই হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায় আখ্যানমাঠে নেমেছেন। শ্রেণি সংগ্রামের চিত্রের মধ্যে সময়ের রাজনীতি, পুঁজিবাদ, উন্নয়ন, ক্ষমতাতান্ত্রিক প্রয়োগ, লোকাল নেতার রকমফের, সুবিধা অনুসারে দলবাজি নিয়ে যে সময়ের দূষিত প্রবাহ তাই তাঁর আখ্যানের নাভিশ্বাস। শ্রেণিশত্রু থেকে শ্রেণিসমন্নয়, শ্রেণিচ্যুত হবার প্রক্রিয়া ও মার্কসীয় দর্শনের ফাঁক ফোকর দিয়ে পুঁজিবাদ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গিয়ে সমস্ত চরিত্ররা চিলচিৎকারে, খিস্তির অমাবস্যায় ভরিয়ে দেয় লোকালয়। তবুও সভ্যতার আলো আসে না। বুর্জোয়া রাষ্ট্রে তা আসবেও না। ফলস্বরূপ প্রলেতারিয়েত সমাজের দংশনক্ষত আর্তনাদ, অস্তি মজ্জার পচনক্রিয়া নিয়ে হিরণ্ময়কে একের পর এক আখ্যান লিখতে হয়।
হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায়ের কোনো টেক্সটকেই মিডিয়া, পুঁজিবাদের বিভিন্ন স্তম্ভ মাথা তুলে দাঁড়াতে দেবে না। কেননা তিনি প্রলেতারিয়েতকে প্রশ্ন করতে শেখান, প্রলেতারিয়েতের ঔদ্ধত্য ও রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে শক্তি প্রয়োগের ভাষা শেখান। যে ভাষা, ঔদ্ধত্য, খণ্ড যুদ্ধ প্রতি মুহূর্তে রাষ্ট্র, পুঁজিবাদকে বিপদে ফেলে, ফেলবে। অথচ প্রলেতারিয়েতের মুক্তি নেই, ফলস্বরূপ হিরণ্ময় গঙ্গোপাধ্যায়কে ক্রমাগত সভ্যতার ধারাভাষ্য লিখতে হয়, লিখে যেতে হয়।
সচেতন পাঠক হিসেবে আপনিই বাংলা গল্পকে জিতিয়ে দিতে পারেন। হ্যাঁ আপনিই।