রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ

এইরকম বইই চাই যা যুক্তির সিঁড়ি ভেঙে ভেঙে অভিপ্রেত বচন দেখাতে চায়। গোঁজামিল নয়। নয় কিছু ধুমধাম উদ্ধৃতি। আমি যা বলতে চাই, আমার উপলব্ধি-চিন্তায় ইহা এমনভাবে ছাপ ফেলেছে, তার সংরূপ এমন।

ক্রমাগত প্রশ্ন উত্থাপন, জিজ্ঞাসা, মূলত আত্মজিজ্ঞাসার রোমন্থনের মধ্য দিয়ে উত্তর খোঁজা এবং পাঠককে দেখানো জিজ্ঞাসার সন্ধান এমন।

আমি থেকে আমার অস্তিত্ব। কোথা থেকে কোথায় যেতে চাই। কী আছে শেষে? কেন আছে? সত্যি কি আছে? পর্বে পর্বে অনুসন্ধান ও পাঠককে জানান দেওয়া।

আমরা তো সকলেই বেঁচে আছি কিন্তু সেই বেঁচে থাকার রহস্য কোথায়? সত্তা, ‘আমি’ বোধ, তা জ্ঞান-ভাষা দ্বারা কীভাবে প্রভাবিত, বিচ্ছিন্নতার প্রকৃতি, সংলগ্ন-অসংলগ্ন কার্যক্রম আমাদের চিন্তারাজ্যে ক্রমাগত চিত্র আঁকছে অথচ তা আমরা জানি না, ভাবি না। লেখক আমাদের পর্বে পর্বে ভাবিয়েছেন। শুধু ভাবানোই নয় দেখিয়েছেন আমাদের সত্তা এমন। আমার ‘আমি’ কোন গহনতলে কতভাবে লুকিয়ে আছে।

সদা-সর্বদা ‘আমি’র প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ উপস্থিতি-অনুপস্থিতি যা প্রজ্ঞাময় যা ব্যক্তিকে চালিত করে, ব্যক্তির জ্ঞান-চিন্তাকে উসকে দেয়, যে জ্ঞান-চিন্তা বিরাট অর্থে ক্ষমতার আধার, যার স্বরূপ-সংরূপ প্রকৃতি-মানুষ থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে আরও ভাবসাগরে ডুবিয়ে দেয় তার তত্ত্বতালাশ জটিল নয় জলের মতো সহজ করে। অস্তিত্বের সারথি হয়ে ‘আমি’র সংশয়-সন্দেহ, বিশ্বাসের নিদ্রাভঙ্গ করে দর্শনের আলোয় নিজেকে খোঁজা। সর্বত্রই তো ‘আমি’র উপস্থিতি। তা বিশ্বাস-অবিশ্বাস, ঈশ্বর-শয়তান ভাবনা যাই হোক না কেন।

বারবার প্রশ্ন তুলে যুক্তি ভেঙে ভেঙে জাগতিক সজ্জা সমূহের অভ্যন্তরীণ গোলাযোগ স্পষ্ট করে দেখান সমস্তের মধ্যে ‘আমি’ অবধারিত। ‘আমি’ আছি বলেই আমার চিন্তা। সত্তার অংশ হিসেবে চিন্তার জন্ম, উৎপত্তি অবধারিত। অস্তিত্বের সারাংশ হিসাবে আমি ও আমার চিন্তার সত্তা কোথায় কতরকমভাবে কেমন করে উপস্থিত-অনুপস্থিত তার দৃষ্টান্তসহ উপস্থাপন। ‘আমি’ কখন সম্পর্কযুক্ত হয়ে ওঠে, আমিত্বের অহমিকা কোন গোপন অছিলায় ক্ষমতাতন্ত্রের বয়ান জাহির করে, অপরকে নাশ করে নিজেকে শ্রেষ্ঠ ভাবার মধ্যে কোন দর্শন বা অস্তিত্বের সারাংশ লুকিয়ে আছে তার জরুরি বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন দিয়ে গ্রন্থ শুরু করে গ্রন্থ শেষও হয়েছে প্রশ্ন তুলে। প্রশ্ন নিয়েই তো জীবন।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *