রবি আড্ডায় পুরুষোত্তম সিংহ
বিচ্ছিন্নতা, বিরোধাভাস, জীবনের চড়াই-উতরাই, আলো-অন্ধকার নিয়ে তপনকর ভট্টাচার্য একটা দৃশ্যকে ধরে রাখেন। কিছু সংলাপ, কিছু অস্তিত্ব, কিছু জীবনযন্ত্রণা, কিছু স্বপ্নাকাঙ্ক্ষা নিয়ে জীবনের আরোগ্য সেতু রচনা করেন। মিথ্যে, ভুলভুলাইয়া, পালিয়ে বাঁচা, সময়ের নাশকতা সব মিলিয়ে তপনকর ভট্টাচার্য যাপিত সময়ের বিভীষিকাকে যেমন বুনন করেন তেমনি সেই সময়ের উনুনে দগ্ধ মানুষের আর্তরব কত প্রখর, তপ্তময় তার ইশারা দেন।
প্রবৃত্তি সর্বস্ব মানুষের বিবিধ প্রবণতা, প্রেম-যৌন আকাঙ্ক্ষা, ভোগ-উপভোগ নিয়ে রিপুময় মানুষের নানাবিধ কাণ্ডকারখানাকে বিভিন্ন ফর্মে তপনকর ভট্টাচার্য সাজিয়েছেন। সবটাই আধুনিক মানুষের জীবন সংকট। এই পড়ন্ত বেলায় বিশ্বাসের ভূমি এলোমেলো হয়ে গেছে। সকলেই স্বার্থকে কেন্দ্র করে বৃত্ত সম্পূর্ণ করতে চাইছে। কিন্তু প্রেম-যৌনতা তো চাইছে অন্য রসদ। নারী-পুরুষ সম্পর্ক গড়েও ভিন্ন সম্পর্কে যাচ্ছে, নিজের অতৃপ্ত আত্মাকে তৃপ্ত করতে নানাবিধ পরিসর নির্মাণ করে চলেছে।
তপনকর ভট্টাচার্য নাগরিক জীবনেরই গল্প লিখেছেন। অন্তত ‘চিলেকোঠা’ গ্রন্থের গল্পগুলি সেই সাক্ষ্য দিচ্ছে। হনন-আত্মহননের মধ্য দিয়ে ফ্ল্যাটজীবী মানুষের চিন্তা-চেতনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, প্রেম-ভোগবাদ, নষ্টামি এবং জীবনের নিয়ন্ত্রক রাজনীতি, ক্ষমতায়নের বৃত্ত গড়ে তুলেছেন। পরিসর নয় ব্যক্তির বিবিধ প্রবণতা নিয়ে যে জটিল জাল, যেখানে ব্যক্তি ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় বন্দি সেই রহস্য উঁকি দিতে দেখি। মনপাখি কখন কোথায় উড়ে যায়, ব্যক্তির চেতনায় কত রহস্য ধরা দেয়, ব্যক্তির ক্লেদ-অহংকার-অহমিকা কত খতরনাক হতে পারে সেই জটিল জাল ও সম্পর্কসূত্র তিনি নির্মাণ করে চলেন। আত্মদমন, যৌনতা, অনিয়ন্ত্রিত ভোগবাদ, বিষাদ, সংকট সবমিলিয়ে তিনি ব্যক্তিকে খনন করে চলেন। তপনকরের আখ্যানের প্রায় সকলেই যেন অসুখ নগরের বাসিন্দা। একটা অস্থিরতা, একটা বিস্ময়, ক্ষমতার চূড়ান্ত সোপানে পাগলামি, নিজেকে অতিমাত্রায় বিকিয়ে দেওয়া ও ভোগবাদের নামে একটা আশ্চর্য সমাপতন নিয়ে চরিত্ররা বিরাজ করে।
আপনি থাকছেন স্যার।