রবি আড্ডায় স্বর্ণা দাস
“তার কূলজোড়া জল, বুকভরা ঢেউ, প্রাণভরা উচ্ছ্বাস।
স্বপ্নের ছন্দে সে বহিয়া যায়।” ( তিতাস একটি নদীর নাম/ অদ্বৈত মল্লবর্মণ) সভ্যতার আদিকাল থেকেই নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে জনজীবনে ঢেউ। নদী কেন্দ্রীক বাংলা সাহিত্যে উপন্যাস যেমন আছে কবিতার জগতেও তার কমতি নেই। এক একটি নদীর গতিপথ, তার চরিত্র, তার রং, রূপ, ছন্দের প্রভাব পরে নদী তীরবর্তী মানুষের জীবনে। বিশেষ করে আঞ্চলিক বা ছোটো নদী গুলি তো ঘরের লোক হয়ে যায়। ‘মুহুরী একটি নদী’ অভীককুমার দে রচিত কাব্য। বইটি পাঠ করলে পাঠক পাবেন ত্রিপুরা রাজ্যের এক ছোট্টো জনপদের জীবন চিত্রের ছবি। প্রথম কবিতা ‘চরকবাই’ এ দেখা যায় এই জনপদটির নাম ইতিহাস ” আসলে চরক কোনো চড়ক নয়। / চরকিও না। ” ‘জ্যামিতি গ্রাম’ কবিতায় দেখা যায় চরকবাই জনপদের কাব্যজ্যামিতিক ছবি ” চরকবাই একটি জ্যামিতিক গ্রাম। / ধরা যাক, জাতীয় সড়ক একপাশের শক্ত বাহু / সড়ক থেকে বাইখোড় ছড়া ও চরকবাই ছড়া / মিশ্র বসতির দু’ দিক, / জলসীমানা এঁকে বুক ছুয়েছে মহুরীর।” ভারতীয় সভ্যতা কৃষি সভ্যতা। কৃষি নদীকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। কবি বলেছেন ‘ নিজস্ব নদী ‘। তবে যে শুধু নদী সুখের তা তো নয় নদী তো দেশভাগের সাক্ষী ” আমার ঠাকুরদার নদী ফেনী, আমার মুহুরী ‘।
বাবার দু’নদী নদী / একটি রিফিউজি/ একটি অবৈধ।'( সম্পদ) পুরো কাব্য জুড়ে নদী ওতোপ্রোতো ভাবে উঠে এসেছে। নদী কবিকে শেখায় জীবনের শৃঙ্খলা বোধ ‘ ছোটোবেলায় ভেসে যাওয়া বাঁশের লাইন দেখে / লাইন ধরা শিখেছি, অনেক লাইন স্কুল থেকেই / একাগ্রতার বাণীব্রত শেষ করেও / ঠিক কখনো একাগ্র হতে পারিনি। “( মুহুরী একটি নদী) কবি তো কর্ষণ করে। ফসল তোলে ঘরে। কৃষকের কাছে ফসল মা ‘ ‘ফসলে ফসলে প্রতি- মা ‘ লেখা এগিয়েছে কবির অনুভূতিতে ভর করে। ঠিকানা, মা, হাটভাঙা ইতিহাস কবিতা গুলিতে তা প্রকাশিত। বঙ্গজীবনের একখন্ড পাহাড়ি চিত্র কাব্যে দেখা যায়। পশ্চিমবঙ্গের মফস্বল শহর মালদায় বসে পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরা বাঙালি জীবন, মহুরী নদীকে কেন্দ্র করে চকরবাই জনপদের তথা দেশ ভাগের পর শিকড় ছেড়ে আসা মানুষের আর্ত – সুন্দর জীবনের চালচিত্র মহুরী একটি নদী।
কবিতা সমগ্রের অন্তর্গত
কাব্য – মহুরী একটি নদী
কবি – অভীককুমার দে
নীহারিকা পাবলিশার্স, আগরতলা, ত্রিপুরা