
রবি আড্ডায় কৌন্তেয় নাগ
পর্ব ৭
তোমার নাম, আমার নাম, ভিয়েতনাম।
আজ আমরা স্বপ্নের হো চি মিন শহরে

১৯৭২-৭৩ সালে উত্তাল কলকাতার স্লোগান
❝ ভিয়েতনাম
ভিয়েতনাম…..❞
আজ ও এই স্লোগান শুনলে আমাদের শরীরে রক্ত টগবগ করে ওঠে।
এই দেশের পতাকার রং টকটকে লাল আর তার মাঝখানে হলুদ তারা।
লাল রং রক্তপাত এবং বিপ্লবী সংগ্রামের প্রতীক।
হলুদ তারাটি ভিয়েতনামী সমাজের পাঁচটি প্রধান শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করে।
শ্রমিক, কৃষক, সৈনিক, বুদ্ধিজীবি এবং ব্যবসায়ী।
একটু ইতিহাসে ফিরে যায়, উনিশ শতকের শেষ দিকে ফ্রান্স ভিয়েতনাম আক্রমণ করে। বুদ্ধিমান ফরাসিরা দেশটিকে তিনটি অঞ্চলে ভাগ করে দেয় এবং অঞ্চলগুলিকে কম্বোডিয়া ও লাওসের সাথে যুক্ত করে ইন্দোচীন ইউনিয়ন তথা ফরাসি ইন্দোচীন গঠন করে।
ফরাসিরা নিজেদের সুবিধার জন্য ভিয়েতনামের সম্পদ আহরণ করে যেমন ব্রিটিশরা আমাদের দেশে করেছিল।
ঠিক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর (১৯৩৯-১৯৪৫), ভিয়েতনামে উপনিবেশ বিরোধীরা সাম্যবাদী দলের নেতৃত্বে ফরাসি শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে, ঠিক যেমন ১৯৪৭ সালে কূটনৈতিক চালে ভারতকে ভাগ করে ব্রিটিশরা।
১৯৫৪ সালে দিয়েন বিয়েন ফু-তে ভিয়েতনামী সেনারা ফরাসি সেনাদের যুদ্ধে পরাজিত করে।
এরপর ভিয়েতনামকে সাময়িকভাবে দুইটি অঞ্চলে ভাগ করা হয় একটি উত্তর ও অন্যটি দক্ষিণ।
উত্তর ভিয়েতনামে একটি সাম্যবাদী সরকার এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদ বিরোধীরা শাসন করা শুরু করে।
পরবর্তী ২০ বছর ধরে হো চি মিনের নেতৃত্বে উত্তর ভিয়েতনামের একত্রীকরণের একটি আন্দোলন শুরু হয়।
তখন দক্ষিণ ভিয়েতনাম সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্য নিয়ে উত্তর ভিয়েতনামের সেই লড়াইকে ব্যর্থ করার চেষ্টা চালায়।
প্রচুর মানুষের মৃত্যু হয় এই আন্দোলনের ফলে।
সবচেয়ে বড় গণহত্যা বলা হয় ।
প্রচুর সেল আজও জঙ্গলে পরে আছে ফাটে নি।
প্রচুর রাসায়নিক বোমা নিক্ষেপ করা হয়। প্রকৃতির উপর ধ্বংস লীলা চালানো হয়। আজ সেই আমেরিকা লজ্জিত। যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করা উচিৎ হয় নি বুঝতে পারে। এই সময় সারা পৃথিবী ব্যাপী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে ওঠে।ঠিক তখন কলকাতা উত্তাল হয় মিছিলে মিটিংয়ে…. জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে যুদ্ধ বিরতি ঘটে ১৯৭৩ সালে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের সেনা সরিয়ে নেয় এর ঠিক দুই বছর পরে দক্ষিণ ভিয়েতনাম সামজতন্ত্র কায়েম হয়। ১৯৭৬ সালে দুই ভিয়েতনামকে একত্রিত করে একটি সাম্যবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। যা আজকের ভিয়েতনাম, এই জানুয়ারি মাসে ৫০ বছর পূর্তি পালন করবে।দেখে এলাম সেই পোস্টার।
এই স্বাধীনতা সংগ্রামের পুরোধা ছিলেন
“হো চি মিন” যার অর্থ “আলোর ঝলক।”
তিনি ছিলেন একজন কমিউনিস্ট বিপ্লবী নেতা, যিনি পরবর্তীকালে গণপ্রজাতন্ত্রী ভিয়েতনামের প্রধানমন্ত্রী (১৯৪৬–১৯৫৫) এবং রাষ্ট্রপতির (১৯৪৫–১৯৬৯) পদে আসীন ছিলেন।
তিনি ডেমোক্রাটিক রিপাবলিক অব ভিয়েতনামের প্রতিষ্ঠাতা।
ভিয়েতনামে ক্ষমতায় আসার আগে হো চি মিনের জীবন অস্পষ্ট ছিল।
তিনি ৫০থেকে ২০০ ছদ্মনাম ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়।
1967 সালে হো চি-মিনের স্বাস্থ্য হ্রাস পেয়েছিল।
ততদিনে তিনি জাতীয় বীর বা জাতীয় নেতা হয়ে গেছেন। উত্তর ভিয়েতনামে তাঁকে ব্যাপকভাবে জাতির জনক হিসাবে দেখা হত এবং প্রায়শই তাকে “আঙ্কেল হো” নামে ডাকা হতো।
2 ই সেপ্টেম্বর, 1969 সালে হো চি-মিন হানয়ির নিজের বাড়িতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
আমার জন্মের ২ বছর পরে….কমরেডের জীবনের ইতিহাস পড়ার পরে আজ উনার নামে নামাংকিত শহরে।
আমি রোমাঞ্চিত। আমার আবেগ ভালোবাসা কমিউনিস্ট আন্দোলনের সাথে যুক্ত হওয়া মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া হো চি মিন শহরে।
হো চি মিন সিটি জেগে আছে,
ফুটপাথ, খোলা সড়ক,
রাত জেগে থাকে কোলাহলে
নিস্তব্ধতা নেমে আসে ক্লান্তির শেষে।।
নিয়ন আলোর রাস্তায় আমরা কজন,
হেটে বেড়াই খুঁজি, দেখি শহুরে সুখ
আর না দেখা বিস্ময় !!
আলোক আধারের অদ্ভুত মায়াজালে,
অনুভব করি অচেনা এক শহর!!
চেনা শহরের অজানা অস্পর্শ মায়ায়
হারিয়ে যায় রাতের শহরে,
নেমে আসে রাতের নিরবতা।
(কৌন্তেয় নাগ)


রাতের হো চি মিন সিটি জানতে চেয়েছেন কয়েকজন। কবিতার ও জন্ম হলো সেই আবেগে।
তাদের বলি খুব সুন্দর নীদর ধারে পার্টি,নাচ, গান, বাজনা, মার্কেট, ফুটপাতে এলাহি আয়োজন মানুষ ইতিউতি হেঁটে বেড়াচ্ছে।

বিজ্ঞাপনের আলোয় চোখ ঝলসে উঠছে।
বিয়ার পাবের ছড়াছড়ি, মদ বিক্রি হচ্ছে লোকে খাচ্ছে।কোন বিধিনিষেধ নেই।

একটি মাতাল চোখে পড়লো না।অজস্র বিদেশি পর্যটক।
কিছু কিছু রাস্তার দখল নিয়েছে এই সব পর্যটকরা। আমেরিকা, ইউরোপের পর্যটকের সাথে পাল্লা দিচ্ছে ভারতীয় পর্যটক।

টাকা ভাঙানোর অজস্র ব্যবস্থা, ভারতীয় রেস্টুরেন্টের ছড়াছড়ি, আমাদের পছন্দের রেস্টুরেন্ট ছিল দিল্লি দরবার। দাম ভারতীয় মুদ্রায় আমাদের দেশে যা তাই এখানে।

পুরো শহর পরিস্কার চকচক করছে।
ভিক্ষুক চোখে পরে নি।সবাই খুব হাসিখুশি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে।

সমাজতান্ত্রিক ব্যাবস্থায় চলা একটি দেশ বিগত ৫০ বছর ধরে দুরন্ত গতিতে এগিয়ে চলেছে তা অবশ্যই চোখে দেখা দরকার।

নারী পুরুষ সমান এখানে। শিক্ষায় অনেক এগিয়ে গিয়েছে। আর কি চাই? আরও দ্রুত এগিয়ে চলেছে।
হাতে একটু সময় নিয়ে আগে থেকে বুকিং করলে খরচ থাকবে সাধ্যের মধ্যেই বেড়িয়ে পরুন
এই শহর বেড়াতে ভয় পাবেন না।সঙ্গে কিছু ছবি দিলাম রাতের শহরের।

