রবি আড্ডায় কৌন্তেয় নাগ

পর্ব ৬

মধুচন্দ্রিমা যাপনের দেশে

আজ ভেনিসে…. ঠিক শুনেছেন…… হোই আন কে ভিয়েতনামের ভেনিস…. বলা হয়ে থাকে। হাজার হাজার লন্ঠনের আলোতে আলোকিত রাতের দৃশ্য আপনাকে অন্য জগতে নিয়ে যাবে যা বিস্ময়কর।

গাইডের কথা মিলিয়ে সত্যি ১৯০০ শতকে পৌঁছে গেলাম নানান রঙের সিম্ফনিতে ভেসে নিজেকে মুগ্ধ করতে। প্রাচীন এ শহরের স্থাপত্য এবং নিদর্শনে প্রাচ্য এবং পাশ্চাত্য প্রভাব প্রকট ভাবেই লক্ষণীয়। এই হচ্ছে ভিয়েতনামের মনোরম প্রাচীন শহর ‘হোই আন’ বা ভেনিস বলে এখানকার মানুষ।

সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের কাছে অতন্ত্য পছন্দের শহর। এই শহরের বিশেষ কিছু ঐতিহ্য রয়েছে। যা ফেলে আসা অতীত দিনের ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করে। এই হোই আন শহরটি একসময় বাণিজ্য বন্দর ছিল। ব্যবসা বানিজ্যে সমৃদ্ধ আইকনিক ল্যান্ডমার্ক ছিল। এখানে ফানুস-আলোকিত সন্ধ্যা পর্যটকদের ভীষণ ভাবে আকর্ষণ করে।

এখানকার সংকীর্ণ রাস্তাগুলো মনে হয় যেন স্বপ্নের চলচ্চিত্রের এক একটি সেট আর আমি সেই চলচ্চিত্রের চরিত্র হয়ে হেঁটে চলি আমি ইতিহাস আর ঐতিহ্যর সন্ধানে। শহরটিতে ইতিহাস, সংস্কৃতি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের একটি সুন্দর সংমিশ্রণ ঘটেছে। এখানে সংরক্ষিত নানান নকশা আপনাকে মোহিত করবে। এ শহরটি জাপানি এবং চীনা বণিকদের প্রধান মিলনস্থল ছিল। তার নিদর্শন প্রচুর। সন্ধ্যা হলেই এখানে ভ্রমণ প্রেমীদের আকর্ষণ করতে শুরু করে দুই-আড়াই মাইলের বেশি খালের দুই পাশে রংবেরঙের আলোকিত লন্ঠন।

খালের ওপর ভাসমান ডিঙিতে লন্ঠন জ্বলে ওঠে। দু’পাশের সুসজ্জিত ক্যাফেতে মিউজিকের সুর আর লন্ঠনের আলোয় আলোকিত হয়ে ওঠে। হোই আনের প্রধান প্রতীক হলো ট্রান ফু স্ট্রিটের পশ্চিম প্রান্তে জাপানি সেতু। খালের দু’পাশ ধরে রেখেছে একটি সেতু। অনেক পর্যটকের ভিড় এ সেতুটিতে। জাপানিরা শৈল্পিক স্থাপত্যের সেতুটি নির্মাণ করে ১৫৯০ সালে। মাইলস্টোনে লেখা আছে নির্মাণকাল। পিলার ও রেলিংয়ে বিভিন্ন খাঁজে খাঁজে নকশা আঁকা আছে। রাস্তার দু’পাশে নৌকা চলাচলের জন্য মাঝখানটা কিছুটা উঁচু। অনেকটা ধনুক আকৃতির। এই সেতুটি হোই আন শহরের কেবল প্রতীকই নয়, একটি ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্কও।

গাইড জানালো কাছাকাছি ফুজিয়ান চায়নিজদের অ্যাসেমব্লি হল। এখানে প্রাচীন শহরের সবচেয়ে সুসজ্জিত চায়নিজ মন্দির রয়েছে । এ শহরে মোট পাঁচটি সুন্দর সুসজ্জিত অ্যাসেমব্লি হল রয়েছে। এর মধ্যে ফুজিয়ান অ্যাসেমব্লি হল সবচেয়ে জনপ্রিয়। একসময় এ হলগুলো উপাসনালয় ছিল। এখন কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। জাপানি সেতু পেরিয়ে খালের আরেক পাশে পার্ক, ক্যাফে ও পাব।সারা পৃথিবী থেকে হানিমুন করতে এসেছে অজস্র জুড়ি যাদের জুড়ি অতুলনীয়।

পার্কের বেঞ্চিতে কিছুক্ষণ বসে থেকে দেখছিলাম এ শহর আর এখানে বেড়াতে আসা পর্যটকদের। স্থানীয় ভিয়েতনামির চেয়ে ঢের বেশি অন্যান্য বিদেশি পর্যটক। একপাশে লন্ঠনের আলোয় ভাসমান নৌকার প্রতিচ্ছবি পড়ে খালের জলে।৷ হাজারো লন্ঠনের প্রতিচ্ছায়ায় অপার্থিব একটি ফটোগ্রাফ মনে হয়। কাচের মতো স্বচ্ছ জলের নিচেও যেন অনেকগুলো লন্ঠন জ্বলে আছে। নানা রঙের, নানা নকশার প্রজ্বলিত লন্ঠন। এ কারণে হোই আনকে বলা হয় ‘লন্ঠনের শহর’। সবর্ত্রই লন্ঠন জ্বলে আছে– বিভিন্ন প্রাসাদে, পার্কে, ক্যাফে, নৌকায়, বাজারে, দোকানে, সেতুতে। কোথায় নেই! সবখানে, সব জায়গায়।

পার্ক থেকে বেরিয়ে পড়ি নাইট মার্কেটের দিকে। যেদিকে কফিশপ ও রেস্টুরেন্টের খাবারের দোকানের সারি রয়েছে। ভিয়েতনামিজ খাবারের জন্য সবচেয়ে উপযুক্ত জায়গা হোই আনের নাইট মার্কেট। সন্ধ্যা থেকে বিক্রেতারা স্ট্রিট ফুড বিক্রি শুরু করে। সবজির স্যুপ, কাপ নুডলস, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পাস্তা, চিকেন ফ্রাইসহ নানারবম খাবাবের পসরা। বিভিন্ন রকমের রঙিন কাঁচা-পাকা ফল বিক্রি করে গাড়িতে করে। বিভিন্ন দামের স্লাইস করা ফলের কাপ পাওয়া যায়। একটি পাকা আমের কাপ কিনে টেস্ট করি। আমের স্বাদ বেশ মিষ্টি আর সুস্বাদু।

এ মার্কেটে স্থানীয় হস্তশিল্প পাওয়া যায়। সন্ধ্যা থেকে যত রাত বাড়ছে ততই যেন প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে। নানা জাতির পর্যটক ও দর্শনার্থীর পদচারণা বাড়তে থাকে। বাজারে সামুদ্রিক খাবার, মসলা এবং হাতে বানানো বিভিন্ন স্থানীয় পণ্য পাওয়া যায়। সিল্কের জন্যও বিশেষ খ্যাত প্রাচীন এ শহরটি। লিখে শেষ করা যাবে না এতো ইতিহাস পরতে পরতে। বিস্ময়কর ইতিহাস সমৃদ্ধ এই শহর এসে দেখে যান একবার সার্থক হবে জীবন।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *