রায়গঞ্জ:
ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের উত্তর দিনাজপুর জেলার সদর শহর হলো রায়গঞ্জ। এটি পৌরসভা এলাকা। ২০০ বছর বয়সী এই শহরটি গড়ে ওঠে কুলিক নদীর তীরে।
রায়গঞ্জ ঘড়ি মোড়
রায়গঞ্জ শহরের নামকরণ নিয়ে মতপার্থক্য:
রায়গঞ্জ নামের উৎপত্তি ঠিক নিয়ে অনেক মতপার্থক্য আছে । কেউ কেউ বলে থাকেন দিনাজপুরে রাজ পরিবারের পদবি রাই থেকে এই নামটি এসেছে। ব্যাপকভাবে গ্রহণযোগ্য আরেকটি মত হ’ল এখানে রাই সর্ষে ব্যপক উৎপাদন হতো বলে এই নামটি প্রাচীনকাল থেকেই পাওয়া ।তবে এককথায় বেশির ভাগ মানুষ মনে করেন “রাই” শব্দটি থেকে ” রায়গঞ্জ” শব্দটি এসেছে, যার অর্থ “রাধা”, যা মহাভারতের একটি চরিত্র। রায়গঞ্জের নিকটতম শহর “কালিয়াগঞ্জ” শব্দটি এসেছে “কালিয়া” থেকে, যার অর্থ “কৃষ্ণ”, যা মহাভারতের একটি চরিত্র। তবে একটা কথা ঠিক যে রাই থেকেই রায়গঞ্জ শহরের নাম করন। এবার সেই রাই শব্দ টি রাজপরিবারের নাম থেকে না সরষের নাম থেকে নাকি মহাভারতের রাধার নাম থেকে সেটা বলা কঠিন।
রায়গঞ্জের অবস্থান:
উত্তর দিনাজপুর জেলার রায়গঞ্জ
শহরটির অবস্থান-
অক্ষাংশ ও দ্রাঘিমাংশ হল ২৫.৬২° উত্তর ৮৮.১২° পূর্ব । এই অঞ্চল টি সমুদ্র সমতল হতে এর গড় উচ্চতা হল ৪০ মিটার (১৩১ ফুট)।
এই শহরটি প্রায় ৩৬.৫১ বর্গ কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। কিন্তু বর্তমান শহরে ক্রমবর্ধমান প্রবণতা ও নগর এলাকার আশপাশের এলাকায় নগরের সম্প্রসারণ ঘটে চলেছে দ্রুত গতিতে। মহানগর এলাকাও এই প্রবণতার সম্মুখীন হচ্ছে। এখন বীর-ঘাই, মারাইকুরা, রুপাহার, বাহিন, কর্ন-জোড়া, মহারাজা হাটের আওতায় বিস্তৃত এলাকা গুলিতেও রায়গঞ্জ শহরের মতো জনসংখ্যা বাড়ছে এবং এই জনসংখ্যা পুরোপুরি ভাবে রায়গঞ্জ শহরের উপর নির্ভরশীল।
রায়গঞ্জ শহরের ওপর নির্ভরশীল গ্রাম গুলি:
সুভাষগঞ্জ,মহারাজাহাট,বিন্দোল ভাটোল,
রামপুর,কর্ণজোড়া,রুপাহার,বিলাসপুর,আলতাপুর, টুঙ্গিদিঘি, বামোনগ্রাম,চাপদোয়ার,বিশাহার,অভোর,
নরম,টেনহরি,গৌরী,শ্যামপুর,বিরাহিমখন্ড,হাতিয়া,ইটাল
জনসংখ্যা :
২০১১ সালের আদম শুমারী অনুযায়ী রায়গঞ্জ জনসংখ্যা সংখ্যা ছিল ১,৯৯,৭৫৮ জন, যার মধ্যে ১,০৪,৯৬৬ পুরুষ এবং ৯৪,৭৯২ জন নারী । ০-৬ বছর বয়সী জনসংখ্যা ২২,০২৮ জন। ৭+ বছর বয়সী জনসংখ্যার জন্য কার্যকর সাক্ষরতার হার ছিল ৮১.৭১%।ভারতের ২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে রায়গঞ্জ শহরের জনসংখ্যা ছিল ১৬৫,২২২ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৫৩%, এবং নারী ৪৭%।এখানে সাক্ষরতার হার ৭৫%, । পুরুষদের মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৯%, এবং নারীদের মধ্যে এই হার ৭১%। সারা ভারতের সাক্ষরতার হার ৫৯.৫%, তার চাইতে রায়গঞ্জ এর সাক্ষরতার হার বেশি।এই শহরের জনসংখ্যার ১১% হল ৬ বছর বা তার কম বয়সী।
নদী:
রায়গঞ্জশহরের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে কুলিক নদী।গ্রীষ্মকালে জল না থাকলেও বর্ষাকালে দুকূল ছাপিয়ে জল পরিপূর্ন হয়।এই কুলিক নদীকে কেন্দ্র করে পূর্বে জলপথে ব্যবসা হতো কিন্তু, কুলিক, নদীর নাব্যতা হ্রাসের কারণে ১৯৭০-এর প্রথমার্ধে জলপথের মাধ্যমে ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া হয়, বিশেষত বন্যা প্রতিরোধে বাঁধ নির্মাণের পরে। বন্দর এলাকা ধীরে ধীরে তার তাৎপর্য হারিয়েছে এবং বর্তমানে, এটি রায়গঞ্জের সবচেয়ে পশ্চাৎপদ এলাকায় পরিনত হয়েছে।
রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য:
রায়গঞ্জ বন্যপ্রাণ অভয়ারণ্য কুলিক, পক্ষী নিবাস নামেও পরিচিত।বৃহৎ জনসংখ্যার এশীয় শামুক খোল এবং অন্যান্য প্রানির, পাখির আবাসস্থল এবং এটি এশিয়ার বৃহত্তম পাখি অভয়ারণ্য। কুলিক, নদীর তীরে রায়গঞ্জ শহরে অবস্থিত, যা শহরটিকে জলপথের সংযোগের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান হতে সাহায্য করেছিল।