সোমা সরকার

নবমীর রাত নামতেই মনটা খারাপ।সেই ছেলেবেলা থেকেই।  সেই খারাপ লাগা আজও গেলো না।  রাত গড়ালেই দশমী।  মা চলে যাবে নিজের বাড়ি। আবার একটা বছরের অপেক্ষা । দশমীতে মায়ের মুখটা ভার।বড়ো মুখে শুনতাম। ছোটো বেলায় সেসব চোখে খুব একটা পড়তো না।  বাপের বাড়ি থেকে  বিদায়ের আগে মেয়েকে আরেকবার বরণ করার পালা দেখতাম।

এঁয়োদের ভিড়  জমতো মন্ডপে মন্ডপে।দশমীর দিন সিঁদুর ছোঁয়ানো ভীড়। সাথে যাদের ঘরে ছেলে পুলে আছে তাঁরাও মায়ের আঁচল ধরে মন্ডপে পৌঁছে যেতো বই খাতা সাথে নিয়ে। মায়েরা সিঁদুর ছোঁয়াবে ঠাকুরের  কপালে  সাথে অন্য মহিলাদেরও।তখন সেলফির চল ছিল না। সিঁদুর মেপে ঝোঁকে লাগানো হতো না । আর  ছেলে পুলেরা তখন    সরস্বতীর পায়ের থেকে ফুল বেলপাতা নিয়ে বইয়ের ভেতরে রাখতো ( মোবাইল থাকলে হয়তো ছবি তুলেই কাজ গোটাতো) যাতে বিদ্যা বুদ্ধি ফুল বেলপাতা হয়ে বই থেকে মাথায় ঢোকে। সেই দলে আমাদের মতো হাজার হাজার ছিল।

দশমীর সাথে আরও একটি যে বিষয় জড়িয়ে আছে তা হল মায়ের মুর্তির বিসর্জনের পর বাড়ির বড়োদের প্রনাম। আত্মীয় পরিজনদের সাথে পাড়া পড়শিদের বাড়ি গিয়ে গিয়ে বিজয়া করা। সাথে মিষ্টিমুখ।  ফাস্ট ফুড  ছিল না, এত বাহারি মিষ্টির চল ছিল না। তখন বিজয়া  বললেই নারকেলের নাড়ু, তিলের নাড়ুর মিষ্টি মুখ বোঝাতো। দিদা, কাকিমা, জেঠিমাদের  প্রনাম ঠুকলেই নাড়ু হাতে গুঁজে দিয়ে বলতো এখন এটা খা। পরে অন্য কিছু খাওয়াবো। নাড়ু,  নিমকি, বোদে, মিহিদানা বিজয়ার প্লেটের ঝলক উপচে পড়তো দুচোখে।  কখনো কখনো শেষ পাতে মুখ ঝাল করতে ঘুগনি।  এখন সে সব অতীত।এখন তো প্রণামের চলটাই ধীরে ধীরে উঠতে বসেছে। তবুও আমরা বাঙালি। মনে
প্রাণে বাঙালি।  আমাদের স্মৃতি আমাদের বাঙালিয়ানাকে অটুট রেখেছে। তাই তো মা, দিদাদের প্রণামে আজও হাতে নাড়ু পেয়ে খুশি হয়ে সেই ছোট্ট বেলার অলিগলি পথে কয়েক সেকেন্ড ঘুরে নিয়ে আবার পরের বছরের অপেক্ষায় পথ চেয়ে বসে থাকা যায়।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *