পুরুষোত্তম সিংহ
দেবজ্যোতি রায় গল্প, গপ্প, কাহিনি, ছোটোগল্প কিছুই লিখতে চাননি। তিনি একটি দর্শন রচনা করতে চেয়েছেন। তিনি একটা নিজস্ব গদ্যসরণিতে হেঁটে যেতে চেয়েছেন। যে পাঠক গদ্যসরণি, অস্তিত্বের আত্মখননে আসতে চান তাকে স্বাগত, যে চান না তাকে সদম্ভে নিকুচি করা। তিনি কোনো লক্ষে পৌঁছতে চাননি। অস্তিত্বের জায়মান অন্ধকারে যে বিদ্রোহ, আত্মগ্লানি, সংশয়, যৌন পিপাসা, বিভ্রান্ত প্রবণতা, সংস্থিতির অহমিকা, মরবিড, অ্যাবসার্ড তাই দেখাতে চেয়েছেন। মধ্যবিত্ত মেকিবোধের সমূল উৎপাটন ঘটাতে চেয়েছেন। ফলে তাঁকে নেমে যেতে হয়েছে অন্ধকারের জগতে। সভ্যতার জাতীয় সড়ক দিয়ে না গিয়ে জাতীয় সড়কের আশেপাশে যে অলিগলি, যেখানে মানুষ আত্মত্রাণের জন্য নীরবে অবস্থান করে অথবা নিজের চাহিদা-পিপাসা মেটাতে গোপনে প্রবেশ করে সেই বন্ধ দুয়ারে প্রবেশকের তালাচাবির আবিষ্কারক তিনি। এই মনন প্রবণতা কোথা থেকে গড়ে উঠল? ব্যক্তিগত জীবনে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে পড়া, নকশাল আন্দোলনসহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের যাবতীয় বীভৎস বাস্তবতার অভিশাপ বহন, পর্বে পর্বে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের রকমফের প্রত্যক্ষ করা এবং যৌবনেই হাংরি গোষ্ঠীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে সাহিত্যের নতুন প্রবণতার পরিচয়ের মধ্য দিয়েই তিনি নিজের পথ করে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন। দেবজ্যোতি রায়ের আখ্যানের ভিতরে রয়েছে দর্শনের চোরাগোপ্তা চিরুনি তল্লাশি। অস্তিবাদ, নৈরাশ্যবাদ, শ্লীলতা-অশ্লীলতার পাঠ, মধ্যবিত্ত ভণ্ডামি, আলো-অন্ধকারের হরেকরকম খেলাসহ ব্যক্তির খননের যাবতীয় পাঠতন্ত্রের সঙ্গে পরিচিত হলেই তাঁর আখ্যানের স্বাদ নেওয়া সম্ভব। এখানে কোনো গল্প পাওয়া যাবে না। বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা। বিচ্ছিন্ন কিছু দৃশ্য। যা জীবনচরিতের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ব্যক্তির খননখাদকে উন্মুক্ত করতে অগ্রসর হয়েছে।
প্রচ্ছদ চিত্র :কৌশিক সরকার