5 G এর যুগে প্লাস্টিক ও ম্যালামাইন যতই রমরমা হোক আজও মাটির তৈরি ঘট, নিদ্রা কলস, সন্ধিপূজার প্রদীপ,রচনা হাড়ির বিকল্প তৈরি হয় নি । আদি –অকৃত্রিম মাটিই যার মূল উপাদান । পালেদের হাতের ছোঁয়ায় ‘চাক’ ঘুরিয়ে তৈরি হয় পূজার উপাদান । পূজার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়েও তাঁরা পায় না কোন স্বীকৃতি । তাদের আক্ষেপ প্রতিমা শিল্পী, মন্ডপশিল্পী ও আলোকশিল্পীদের নিয়ে হইচই হলেও তাদের আঙুলের ছোঁয়ায় যে যাদু আছে সে কথা কেউ মনেই রাখে না । আর পূজার ওই উপাদান তৈরি করতে অন্যান্য বছর কুমোরপাড়ার শিল্পীদের নাভিঃশ্বাস ফেলার জো থাকে না । তাদের আক্ষেপ,‘ আমাদের তৈরি সরঞ্জাম ছাড়া পুজো হয় না অথচ আমাদের কেউ মনেই রাখেনা? ’
কেমন আছেন এই সব মৃৎ শিল্পীরা ?এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে ইসলামপুরের কলেজ সংলগ্ন পালপাড়া, অসুড়াগড়ের পালপাড়া ,জগতাগাঁয়ের পালপাড়া গিয়ে দেখা গেল ‘চাক’ (বড় চাকা) ঘুরছে বনবনিয়ে ।আঙুলের কুশলি চাপে মাটির তাল নিমেষে বদলে বদলে নানা রুপ পাচ্ছে । তৈরি হচ্ছে কলসি, ঘট, পিলসুজ, ধুনুচি-আরও কত কী। কলেজ মোড়ের পালপাড়ার রমণীদের কথায় , এ সব ঠাকুরের জিনিস । শুদ্ধাচারে তৈরি করতে হয় । ভোর বেলায় উঠে পালপাড়ার প্রায় সব বৌ স্নান সেরে তার পর কাজে হাত দেন । মাল তৈরি হলেও দশকর্মা ভান্ডার থেকে অন্যান্য বারের তুলনায় অর্ডার কম আসছে । আমরা সেইভাবে মাল তৈরি করছি ।অসুড়াগড়ের মদন পাল বলেন, মাটির তাল থেকে তৈরি ঘট, নিদ্রা কলস,পিলসুজ, হাঁড়ি কিংবা প্রদীপ –কোনটাতেই পোড়া দাগ থাকলে চলবে না । টোল খাওয়া বা সামান্য বাঁকা হলেও ক্রেতারা সেসব বাতিল করে দেবেন । তাই পূজার বরাত অনুযায়ী কাজ করা অনেক শক্ত ও পরিশ্রম সাপেক্ষ ।আমরা সারা বছর অপেক্ষা পুজোর এই মরশুমকে ধরতে , কিন্ত এবার যা অবস্থা সব মা দূর্গা জানেন বলে দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়েন তিনি । মৃত্তিকা শিল্পিরা জানান, দুর্গা পূজার সময় ১০-১৫ রকমের মাটির জিনিস কাজে লাগে । মনসা পুজা থেকে তাদের মরশুর শুরু হয় এবং দূর্গা পূজা ছাড়াও লক্ষ্মী পুজো , কালি পুজো, কার্তিক পুজো পর্যন্ত তাদের এই মরশুম চলে ।
মৃৎশিল্পিরা জানান, দুই বছর আগে যে মাটির দাম ছিল ৩০০০-৫০০০টাকা । সেই মাটি এখন তাদের ১০০০০- ১৫০০০টাকা । ইটাহারের মাটির দাম বেশি পড়ে । তবে ঘোষপুকুর, কালাগছের মাটি কিনতে ৯০০০টাকা দিয়ে কিনতে হয় ।অনেক সময় টাকা দিয়েও গুনগত মান সম্পন্ন মাটি পাওয়া যায় না । তা ছাড়া জ্বালানির দাম বাড়ছে হুহু করে । কিন্ত তাদের উৎপাদিত মাটির জিনিসের দাম বাড়ছে না ।
পাল পাড়ার অনেকে এই পেশায় ভবিষ্যত নেই ভেবে ইতিমধ্যে পেশা বদল করে ফেলেছেন । সারা বছর মাটির জিনিস পাত্রের তেমন বিক্রি থাকে না । সস্তায় বাজার ধরে ফেলেছে থার্মোকল, প্লাস্টিক এবং কাগজের থালা –গ্লাস । আর গেরস্থ বাড়িতে ছোটখাট পুজোর সময় নতুন মাটির জিনিস কেনা হয় না অনেক সময়ই ।
স্থানীয় দিলিপ পাল আক্ষেপ করে বলেন , তারা এমনিতে অর্থনৈতিক দিক থেকে বরাবরই খারাপ অবস্থায় থাকছেন তারপর তাদের প্রাপ্য শিল্পের স্বীকৃতি টুকু তারা পান না । সবাই প্রতিমা শিল্পী, আলোক শিল্পী, মন্ডপ শিল্পীদের নিয়ে মাতামাতি করে । তাদের দশ আঙুলের ছোঁয়ায় যে যাদু আছে , তা পুজোর অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হলেও তাদের কথা কেউ মনে রাখে না ।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *