রবি আড্ডায় পিয়ালী মিত্র

আমার ছোটবেলার মহালয়ের দিনগুলি শুরু হতো বাপীর ডাকে ভোর ৪ টে তে । রেডিওতে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া চালিয়ে দিয়ে বাপী ডাকতো, ‘মা, ওঠ ; শুরু হয়ে গেছে ।’ আধো ঘুমে, আধো জাগরণে আমি তখন বাপীর কোলে শুয়ে মহালয় শুনছি । আর, বাপী আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। মাঝে মাঝে পুরো ঘুমিয়ে পড়ছি ; আবার হঠাৎ করে ঘুম ভেঙে প্রশ্ন শুরু করে দিচ্ছি। কতো প্রশ্ন ! কে সিংহ দিলো ? কে ত্রিশুল দিলো ? যুদ্ধ কি হয়ে গেছে ? কখন যুদ্ধ ? ইত্যাদি ইত্যাদি প্রশ্ন করেই চলেছি ; আর, বাপী বিরক্তি হীন হয়ে একটা একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে চলেছে ।
তারপর ৫ টার সময় মহালয় শেষ হলে, আর তখন ঘুম আসতো না। তখন বাপীর কাছে নানান গল্প শোনার পালা। কখন‌ও, দেবতাদের গল্প, কখন‌ও রাজপুত্র – রাজকন্যার গল্প ; কখন‌ও আবার পশু – পাখির গল্প … । তারপর বিছানা থেকে উঠে হাত – মুখ ধুয়ে জল – খাবার খেয়ে বেলা ১০ টা বাজলে, আমি আর দাদাভাই বাপীর হাত ধরে গঙ্গাস্নানে যেতাম। আমাদের বাড়ি নৈহাটিতে। আর, আমাদের বাড়ির পাশ দিয়ে গঙ্গা নদী বয়ে গিয়েছে । আমাদের দুই ভাই বোনকে পাড়ে বসিয়ে রেখে বাপী ‘তর্পণ’ করতে জলে নামতো। পাড়ে বসে দেখতাম, পুরোহিত বাপীকে তর্পণ করাচ্ছে। তর্পণ হয়ে গেলে বাপী গঙ্গায় একটা ডুব দিয়ে উঠে আমাদের দুজনকে নিয়ে গিয়ে গঙ্গাস্নান করাতো । তখন গঙ্গায় স্নান করা ভীষণ আনন্দের ব্যাপার ছিলো। স্নান করিয়ে যখন তুলে আনতো আমাদের বাপী, আমি ইচ্ছা করে গঙ্গার কাঁদায় পড়ে যেতাম, যাতে আবার গঙ্গায় গিয়ে ডুব দিতে পারি । আর, আমার এই দুষ্টমিতে বাপী মুচকি মুচকি হাসতো। …. বড়ো সোনার সেসব দিন ।
এখন আর মহালয় শোনার জন্য ভোরবেলায় উঠি না । রোজকের ওঠার সময়‌ই উঠি । উঠে মোবাইলে ইউটিউবে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া চালিয়ে দিয়ে দৈনন্দিন কাজে থাকি। আট বছর হয়ে গেছে বাপী আর সশরীরে নেই। আছে আমার অনুভূতিতে; আছে আমার চেতনায়; আছে আমার চারিপাশে সর্বক্ষণ। এই আটটা বছর প্রতি মহালয়ার দিন সকালে যখন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের মহালয়া শুনি, ছোটবেলার সেইসব সোনার মুহুর্তগুলি ভীষণভাবে অনুভব করি। আর, সেই সুখ স্মৃতিগুলোর অনুভূতিতে নিজের অজান্তেই চোখ ঝাপসা হয়ে আসে ।

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *