
রবি আড্ডায় কৃষাণু ভট্টাচার্য
বয়স এর কাজ বেড়ে চলা। সংখ্যা হিসেবে নিজের প্রতিপত্তি বাড়ানোর দায় বয়স পেয়েছে সময় এর কাছে। সময় নিতান্তই একরৈখিক আমাদের মতো ছা পোষা মানুষের জন্য। সবাই তো আইনস্টাইন বা স্টিফেন হকিন্স হয়না যে স্পেস,আলো,আলোর বেগ এসব দিয়ে সময় কে বেশ জব্দ করবে।
আমাদের বিষয়ে সময় নির্দয় এবং আপোষহীন। একটা স্টপ ওয়াচ চালিয়ে দিয়েছে কেউ বা কারা ,আপনার কাজ হলো ঘড়ি না থামা পর্যন্ত চালিয়ে যাওয়া,যা হোক করে চালিয়ে যাওয়া।
শ্রেণী বৈষম্য ব্যাপার টা আছে বলেই আগের লাইনে “যা হোক করে” টা জুড়ে দিলাম কারন সবার ক্ষেত্রে ওটা প্রযোজ্য না ও হতে পারে। যেমন ধরুন না আম্বানির নাতি আর রহিম চাচার ভাইপো তো আর স্টপ ওয়াচ জুড়ে একভাবে দৌড়াবে না। এটাকে আর মার্কসীয় সাহিত্য বানাবো না ওসব লোকে খায় না।
মোদ্দা কথা সময়ের একমাত্রিক চরিত্র। আপনি জন্মেছিলেন ,আমিও ,যেমন সবাই জন্মায় আর কি। এটা একটা ইভেন্ট। এই ইভেন্ট এর মাত্র বছর খানেক লাগে একটা তারিখ হয়ে যেতে।আর এখন ফেসবুক মনে করায় ” কাকা আজ তোমার জন্মদিন”!
কৈশোর বয়সের একটা ইভেন্ট মনে করে দেখুন দেখি এখন,উপসংহার টা হবে একটা দীর্ঘশ্বাস দিয়ে। আর কদিন পরে এগুলো ও ফেসবুক ই মনে করাবে শুধু। বিশ্বাস করুন আপনি আর নিজে মনে করতে পারবেন না হয়তো।
ছেলেবেলা,মেয়েবেলা সেই সময়ের ভাবনা,উত্তেজনা,সেগুলো একসময় কতখানি ভেজা ভেজা অনুভূতি ছিল এখন যেনো ড্রাই আইসের মতো শুষ্ক….আবার একটা ধোঁয়ার মতো দীর্ঘশ্বাস।
আমাদের স্মৃতি তৈরী হওয়ার পদ্ধতিটা এমনিতে খুব অর্গানিক,স্বতস্ফূর্ত,আকস্মিক বলেই আমার বিশ্বাস। যেমন বৃষ্টির প্রথম ফোঁটা মাটি ছুঁলে যে গন্ধ আপনার নাকে আসে ,সেই গন্ধ দুম করে বহু ছবি তৈরী করে দেয় একটা মানুষের মাথায়। সেটা অবশ্যই একটা সংবেদনশীল মস্তিষ্ক হওয়া জরুরী,কারণ আমি জানিনা দাঙ্গার সময় যে পেট্রোল বোম বা তলোয়ার , বন্দুক নিয়ে দৌড়ায় তার ক্ষেত্রে ব্যাপার টা কেমন হতে পারে!
নিজের পুরনো স্কুল,কলেজ ,ভাড়া বাড়ী,টিউশন টিচার এর বাড়ীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় পুরনো ছবি ঠিক আপনার মাথা খুঁড়ে বের করে আপনার স্নায়ুতন্ত্র।
বন্ধু,বান্ধবী,প্রেয়সী,ক্রাশ এদের সামনে এলে আপনার মস্তিষ্কের ভেতর এক আলাদা ধরনের “Time dilation”হয়।আপনার বেয়াদব মস্তিষ্ক এবং তার স্মৃতি ধারণ আপনার অনুমতির তোয়াক্কা করে না ।
এবার আসি আপনার আজকে।আমি,আপনি সবাই দৌড়াচ্ছি এবং না জেনেই দৌড়াচ্ছি কারণ হয়তো কোথাও লেখা আছে দৌড়াতে হবে,কিন্তু কোথায় লেখা কেউ জানেনা।
আমি দৌড়াচ্ছি,কারণ আমার মা,বাবা দৌড়াচ্ছেন,তাঁদের মা ,বাবা,ভাই,ভাইপো,ভায়রা ভাই, সবাই দৌড়াতেন।
এখন প্রশ্ন হলো কি লাভ? টাকা???????
অবশ্যই অর্থ দরকার বিশেষ করে যখন শ খানেক টাকার পেট্রোল গাড়িতে ভরে আমাদের ৪০ টাকায় চারটে লেবু কিনতে বাজার যেতে হয়।
মানে মাল্লু দরকার কিন্তু কতোটা?! এর একটা সরকারি লেভেল বেঁধে দেওয়া উচিত বলেই মনে হয় এবং এটা রাজনৈতিক বিশ্বাস ও বটে।
আচ্ছা ধরুন স্যার/ম্যাডাম আপনি দারুন কাজ করলেন বা এককাঁড়ি পয়সা জমিয়ে গেলেন অধের্ক গ্রহ জমিজমা ইত্যাদি, তবু আপনাকে মানবজাতি কদিন মনে রাখবে?মানবজাতির সম্মিলিত ভাবে কয়েক হাজার বছরের ইতিহাস মোটামুটি মনে রেখেছে অথচ মানুষ এই গ্রহে আছে প্রায় এক লাখ বছর ধরে!
মানে আপনাকে মনে রাখবে হয়তো ১০০ বছর….১৫০বছর….তাও বিশাল কিছু করতে ফরতে পালে।
ধুর মশাই আপনি নিজের ফ্যামিলি ট্রি ধরে তিন ধাপ উপরে উঠতেই হাঁপিয়ে যাবেন। দাদুর দাদু র নাম কয়জন মনে রাখে? ……মনে পড়লো?……. থাক!
মানে আল্টিমেটলি আপনাকে আগামী প্রজন্মের বিশেষ কেউ মনে রাখছে না। তাই ইম্পর্ট্যান্ট হলো আপনি কি মনে রাখতে চান। কি মনে করলে ,কাকে মনে পড়লে আয়নায় সামনে গিয়ে একবার দাঁড়াতে ইচ্ছে করে? পাকা চুল ,দাড়ি এসব ছাপিয়ে আয়নার ভেতর ঢুকে বছর কুড়ি,পঁচিশ পিছিয়ে যেতে পারেন। একটা হাত ছুঁয়ে ফেলতে পারেন এই বুড়ো বয়সে,সেটাই বা ম্যাজিক রিয়ালিটি র চাইতে কম কিসে?
এই তো জীবন কালী দা….চোখ বন্ধ করে একবার পেছন দিকে দৌড় মারুন আলোর স্পিডে,দেখবেন স্টপ ওয়াচ উল্টো দিকে ঘুরছে। ছা পোষা,ঘষে যাওয়া এই আপনি আবার সেই পুরোনো দুরন্ত…. flamboyant ! সময় কে ধরতে পারবোনা.. তাই বলে নিজেকে তো ছেড়ে দেওয়া যায়না ।
শেষে তাই এক পেগ অঞ্জন খুড়ো
“সময় বেড়ে চলে
আমি আটকে পড়ে রই
আমার বয়স বাড়ে
আমি বাড়ি না!!”