
রবি আড্ডায় রা জা
১
ডেলিভারি ব্যাগে জল ঢুকে গেছে।
বৃষ্টিতে ভেজা রসিদ।
মোবাইলের আলো নিভে আসছে।
ঘরের ভেতর অপেক্ষা করছে কাস্টমার।
দরজা খোলার পরে কেউ দেখে না
এই ভিজে চটি পায়ে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটাকে।
২
পেঁচানো গলির শেষে মোড়,
ছেলেটা দাঁড়িয়ে, কানে ফোন।
স্কুটি চুপচাপ।
খাবার ঠান্ডা হয়ে গেছে
গুগল ম্যাপ ঘুরছে দ্রুত।
কোন দরজার নম্বর মিলছে না।
একটি বাচ্চা বৃষ্টিভেজা জানালা দিয়ে দেখছে
ছেলেটির অসহায়তা
৩
সিঁড়ির কোণায় বসে
ভিজে প্যান্ট চিপছে।
ভেজা মোজা, পায়ের তালুতে কালো দাগ।
তাকে উঠতে হবে চতুর্থ তলার ব্যালকনি পর্যন্ত।
হাতে কেক আর ডিমের কার্টন।
তারপর শুধুই নিচে—
আরও নিচে নেমে আসা
৪
বৃষ্টি বাঁচাতে জুতো খুলে রাখা।
রাস্তা পেরিয়ে এলো খালি পায়ে।
ছাতার নিচে মোবাইল ধরে
কিউআর কোড স্ক্যান করায়।
ভেজা শার্ট ঠিক করে নেওয়ার সময়
হাতের আঙুল হালকা কাঁপছিল
৫
কলারে জল জমেছে।
ডান হাতের ফোল্ডারে লোগো, পরিচয়।
দোকান থেকে ভেসে আসা স্বর—
“এখন না ভাই, পরে এসো।”
সে হাসে না,
পেছন ঘুরে দাঁড়ানোর আগে
চোখ পড়ে—
একটি আলনায় ভেজা জামা শুকোচ্ছে,
আরও আগে বিক্রি না হওয়ার মতো
৬
চামড়ার ব্যাগটা তেমন ভারী নয়।
তবু পিঠটান পড়ে গেছে দুপুরের আগেই।
বৃষ্টিতে লোকজন দোকানের ভেতর,
সে কাচের বাইরে দাঁড়িয়ে—
মুখে জলের ফোঁটা আর লক্ষ্যচ্যুত সংলাপ।
তার সামনে থাকা গ্লো সাইনবোর্ড
বোঝে না—
কে বিকোলো, কে ফিরল,
কে ভুলে গেল নাম
৭
একটি মেয়ে ফোনে কথা বলছে—
“না রে, কিছুই হয়নি আজও”,
পাশ দিয়ে সেলসম্যান চলে যায়।
হাতে ছাপা ব্রোশিওর,
বৃষ্টির ঝাপটায় রঙ ফ্যাকাসে।
মাথায় শুধু একটাই প্রশ্ন—
এই শহরের ওপর আকাশ নেই কেন?
৮
উপরে টিনের শেড,
জল গড়ায়।
সে দেখে না।
ফোল্ডারে হাত চালিয়ে
ফের গুনে নেয় সংখ্যাগুলো—
যেগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে,
কিন্তু বেঁচে থাকার কথা বলে না।
সে পা বাড়ায় বৃষ্টিভেজা শহরে।
ভেতরে হঠাৎ ঠান্ডা ইচ্ছে জন্ম নেয়—
এবার দৌড়াতে ইচ্ছে করে,
কোথাও নয়,
শুধু অনেক দূরে
৯
জলের গায়ে ছাপ রেখে এগোচ্ছে পা।
ডানদিকে একটা দোকান
বলে—
“এর চেয়ে কম বাজেটে কিছু নেই?”
বাঁয়ে আরও একটা—
“আজ কোনো ইনকোয়ারি আসেনি ভাই।”
কান্না পায় না।
শুকনো চোখ।
ভেতরটা বৃষ্টির চেয়েও বেশি ভেজা।
সে থামে,
অচেনা ব্যালকনির দিকে
তাকিয়ে থাকে অনেকক্ষণ,
যেখানে কেউ নেই,
তবু মনে হয়
ওখানেই যাওয়াটাই ছিল মূল গন্তব্য
১০
দরজা বন্ধ।
ঘরের ভেতর আর কোনো আওয়াজ নেই।
শুধু দেওয়াল ঘড়িটা চলছে—
প্রতিটি টিক শব্দে
একটি ব্যর্থ বিক্রেতার স্মৃতি বেঁচে থাকে।
একদিন সকালে
সে আর উঠবে না সময়মতো।
ঘড়ি থেমে যাবে চুপচাপ।
শহর ঠিকই চলবে নিজের ছন্দে।
আরও কেউ একজন দাঁড়াবে রাস্তার মোড়ে—
একই ব্যাগ,
একই জলে ভেজা কাঁধ,
একই বিক্রয়যোগ্য হাসি নিয়ে