
রবি আড্ডায় কৌন্তেয় নাগ
পর্ব – ৮
কু চি টানেল থেকে ফিরে….. (প্রথম ভাগ)
যা দেখলাম, যা পড়েছি, যা বুঝেছি, তাই শেয়ার করি বন্ধুদের সাথে।

ভিয়েতনাম যুদ্ধে,আমেরিকা লেজে গোবরে হয়ে ছিল ও আমেরিকার অর্থনীতি সেই সময় খারাপ হয়েছিল তথ্য তাই বলে।
আমেরিকার যুদ্ধের ইতিহাসের এক লজ্জাজনক পরাজয়ের ইতিহাস হল ভিয়েতনাম যুদ্ধ।
১৯৫৫ সালে শুরু হয়ে ১৯৭৫ সালে দীর্ঘ ২০ বছরের যুদ্ধে আমেরিকা হারিয়েছে ৫৮,২০০ জন সৈনিক।
আনুমানিক ৩,০৩,৬৩০ জন আমেরিকান সেনা আহত হয়েছিল এই যুদ্ধে। ভিয়েতনামের যুদ্ধ বিশ্বকে দেখিয়েছিল কিভাবে আমেরিকার মত সবচেয়ে শক্তিশালী সামরিক ক্ষমতাধর দেশকে বুদ্ধি আর সাহসের জোড়ে নাকানি চুবানি খাওয়ানো যায়।


কমিউনিস্ট দেশ সেটা করে দেখাতে পারে।
এবং ৫০ বছরে দেশকে উন্নতির শিখরে পৌঁছাতে পারে।
একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন ভিয়েতনাম দুইভাগে ভাগ করা হয়েছিল ফ্রান্সের উপনিবেশিক শাসন শেষ হবার পর।
উত্তর ভিয়েতনাম ছিল কমিউনিস্ট শাসিত ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ছিল পুঁজিবাদী আমেরিকানের মদদ পুষ্ট।
উত্তর ভিয়েতনাম দক্ষিণ ভিয়েতনামকে দখল করে ভিয়েতনামকে এক করতে চেয়েছিল।
পুঁজিবাদকে ভিয়েতনাম থেকে তাড়াতে। তাদের ২০ বছরের দীর্ঘ সংগ্রামই হল ভিয়েতনাম যুদ্ধ।



কোন স্ট্রাটেজিক কারণে ভিয়েতনাম জিতেছিল?
এতো সল্প শক্তি নিয়ে কি ভাবে অসম্ভব কে সম্ভব করলো তার কারণ গুলো ছিল জঙ্গলময় প্রকৃতি,ভিয়েতনামীদের প্রকৃতির উপাদানকে যুদ্ধের ফাঁদ হিসেবে অভিনব ব্যবহার, ভিয়েতনামীদের পাতালে সুরঙ্গ তৈরি এবং বুদ্ধিমত্তার সাথে সেখান থেকে যুদ্ধ পরিচালনা করা।
যাকে আমরা গেরিলা যুদ্ধ বলি।

সোভিয়েত ইউনিয়নের মিসাইল সহায়তা, গুপ্ত বাঙ্কার নির্মাণ, গ্রামবাসীর ছন্দবেশ ধারণ ও যুদ্ধে সাহায্য করা।
আমেরিকান অস্ত্রের পুনর্বার ব্যবহার ইত্যাদি।
সেই সময় ভিয়েতনামে বন-জঙ্গলে ঘেরা ও অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার একটি দেশ। আর আমেরিকান সেনাদের প্রধান যুদ্ধকৌশলই ছিল আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত বিমান হামলা। অত্যাধুনিক যুদ্ধ বিমান।
কিন্তু ঘন জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা,টানেলে লুকিয়ে থাকা ভিয়েতনামদের অবস্থান আকাশ থেকে ভালোভাবে বুজতে না পারার কারণে বিমান হামলা করে আমেরিকান সৈন্যরা সফল হতো না।
তাই বাধ্য হয়ে আমেরিকান সেনারা মুখোমুখি যুদ্ধ করতো।

তাদের সাথে জঙ্গলে একপ্রকার লুকাচুরি খেলা হতো। তবে এক্ষেত্রে ভিয়েতনামীদের চতুর যুদ্ধ কৌশলের কাছে অপদস্থ হতে হয়েছিল আমেরিকানদের।
আর ভিয়েতনামী গেরিলা ছিল এতে খুবই দক্ষ।
জঙ্গলে আমেরিকানদের ট্র্যাপে ফেলে ফেলে ভিয়েতনামী গেরিলারা হত্যা করতো।

ভিয়েতনামীদের প্রকৃতির উপাদানকে যুদ্ধের ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার। ভিয়েতনামী গেরিলাদের অস্ত্রের অপ্রতুলতা ছিল।
উত্তর ভিয়েতনাম, সোভিয়েত এবং চীনের সাহায্য পেলেও সেটা যথেষ্ট ছিল না। গেরিলারা দক্ষিণ ভিয়েতনামী পুলিশদের আক্রমণ করে তাদের অস্ত্র লুট করতো।
যুদ্ধ লড়ার জন্য তাদের মাটিতে পুতে রাখা মাইনেরও অভাব ছিল।
কিন্তু এই সমস্যা তারা সমাধান করে নিজেদের বুদ্ধিমত্তা দিয়ে।
তারা প্রকৃতি থেকে পাওয়া বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে বেশকিছু কার্যকরী অস্ত্র তৈরী করেছিল।
ডাবের মধ্যে লম্বা লম্বা লোহার পিন ঢুকিয়ে তৈরী করা একটি অস্ত্র।
যেটি গাছের উপরে ঝুলিয়ে রাখা হত এবং নিচে একটি ফাদ পাতা হত।
যেন আমেরিকান মাথায় ক্যাপ পড়ে আছে এমন কেউ ফাঁদে পা দিলে উপর থেকে ডাবটি তার উপর পড়ে। ভাবতেই পারছেন এটি যে ব্যক্তির মাথার উপর পড়বে তার কি অবস্থা হবে।

এছাড়া মাটি গর্ত করে বাঁশ,কাঠ ও লোহার পেড়েক দিয়ে তৈরী ফাঁদ। যেগুলোতে ভুলবশত কোন সৈন্য পা দিলেই গুরুতরভাবে আহত হতো। যুদ্ধ চালিয়ে যাবার মত কোন পরিস্থিতি থাকতো না সেই সৈনিকের।
এই ফাঁদটি ছোট নালা,খালের জলের নিচে রাখা হত।
যদি কোন সৈন্য ভুলে এই ট্যাপে পা ফেলতো এবং সে না বুজে পা ছাড়ানোর জন্য উপরে জোরে পা টান দিলেই পা চিড়ে যেত।
এই ভাবে শত্রুদের সাথে লড়াই করতো।
নীচে কিছু ছবি দিলাম, কু চি টানেলে গিয়ে তুলেছি।

দ্বিতীয় পর্বে বাকিটা।
চরৈবেতি চরৈবেতি