রবি আড্ডায় শৌভিক রায়
পায়ের ওপর পা তুলে শুয়ে আছি। বেশ একটা ইয়ে ফিলিংস হচ্ছে।
লোকটা ঢুকল। ঝকঝকে বত্রিশটা দাঁত দেখালো,
- রয়অঅঅ?
বুঝলাম আমাকেই বলছে। উচ্চারণে একটু গন্ডগোল আছে ঠিকই, তবু বোঝা যাচ্ছে। বললাম, - ইয়েস।
- অপারেশনঅ?
- ইয়েস।
- লিম্ফনোডঅ?
- হা মানে ইয়েস
- হোয়ারও?
দেখালাম।
এক গাল হেসে সঙ্গের বাক্সটা খুলল লোকটা। ট্রিমার বের করে গলার নিচের থেকে ট্রিম করতে শুরু করল। এতক্ষণে বুঝলাম ব্যাটা হল নাপিত!
লোকটা চলে যেতে আবার পায়ের ওপর পা তুললাম। দূর থেকে বিপ বিপ আওয়াজ আসছে। ঝকঝকে এই কেবিনের বিছানায় চাঁদের ধবধবে আলো যেন বিছানায় বালিশে! ইয়ে ফিলিংসটা একটু ধাক্কা খেয়েছে। নাপিতকে চিনতে পারিনি।
- রয়?
আবার কে?
মাথা ঘুরিয়ে দেখি মৃদু হাসি নিয়ে একজন দাঁড়িয়ে। গায়ে একটা জোব্বা মতো। কনফিডেন্স লেভেল এবার তুঙ্গে। ভুল আর করছি না। - অপারেশন?
- ইয়েস
- লিম্ফনোড?
- ইয়েস
- হোয়ার ইট ইজ?
- হেয়ার….ইন দা গ্যাপ অফ নেকবোন…
- মাই পুওর চাইল্ড। গুড সেভ অল।
জোব্বার পকেট থেকে বাইবেল বেরোল। হাসি হাসি মুখে তিনি পাঠ শুরু করলেন। বুঝলাম ইনি ফাদার!
মহা যন্ত্রণা! ইয়ে ফিলিংসের দফারফা ততক্ষণে। ফাদার বেরোতেই ঝলমলে চেহারা নিয়ে মহিলাটি হাজির।
- মি. রয়?
- ইয়েস
- অপারেশন?
- ইয়েস। লিম্ফনোড। হেয়ার। ইন দা গ্যা…
- প্লিজ স্যার টেক দিস কফি।
এবার মাথা গরম হয়ে গেল। এটা কী হচ্ছে! কোন ধরণের ফাজলামি? নাপিত আসে, ফাদার আসে, কফি দিতে স্টাফ আসে! প্রত্যেকেই একই কথা বলে!
চার নম্বর লোকটাকে পাত্তা দিলাম না। আনইমপ্রেসিভ চেহারা। দেখেই মনে হচ্ছে কেমন যেন। এতক্ষণ ধরে যা বুঝেছি তাতে এ হয়ত ওয়ার্ড বয় (যদিও ওল্ড বয়) হবে। লোকটা নাম ধরে ডাকলেও পাত্তা দিলাম না। পুরো ঘ্যাম নিয়ে শুয়ে রইলাম পায়ের ওপর পা তুলে।
- প্লিজ লাই স্ট্রেট। পুট ইয়োর লেগস ডাউন স্যার। ওয়ান্ট টু চেক বি পি অ্যান্ড পালস।
কয় কী! মাথা ঘুরিয়ে দেখি জোব্বার ওপর লেখা ড. প্রসাদ। এই সেরেছে! - মাইসেলফ ড. প্রসাদ। অ্যাসিস্ট্যান্ট অফ ড. নিলমএক্কম।
ও হরি! তাহলে তো হবেই। ড. নিলমএক্কমকে দেখে প্রথমে আমি উত্তরবঙ্গের এক বিশেষ দেবতার কথা ভেবেছিলাম। ওরকমই মোটা পেট। মিশকালো গায়ের রং। কপালে আবার সাদা ভস্ম। ওঁর অ্যাসিস্ট্যান্ট এরকম হবেন তাতে আর কী!
এরপর আর কী!
অপারেশন টেবিলে ড. নিলমএক্কম গান শুরু করলেন। জিজ্ঞাসা করলাম,
- ডক্টর আর ইউ ফিলিং নার্ভাস?
হো হো করে হেসে উঠলেন উনি।
- বিট
- হোয়াই ডক্টর?
- টু গেট সাচ আ নটি পেশেন্ট।
- দেন লিভ দিস জব অ্যান্ড বি আ সিঙ্গার।
- হা হা হা হা…গুড সাজেশন। বাট নাও জাস্ট শাট আপ। আই অ্যাম অপারেটিং অ্যান্ড ইউ আর চ্যাটিং! মাই গড!!
ড. নিলমএক্কম আবার শুরু করলেন,
- তা না না তানা নানা না….উধাত্তাই পাঠিয়িল মান্দিপথেন্না…..
অপারেশন বলে পায়ের ওপর পা তুলতে পারছিলাম না। পা লম্বা করেই গান শুনছিলাম। ছুরি কাঁচির আওয়াজ আসছিল।
ইয়েটা আবার ফিরে এসেছিল। বুঝতে পারছিলাম কেবিনের চাইতে অপারেশন টেবিলে শুয়ে থাকার স্ট্যাটাসটা অনেক বেশি!!