রবি আড্ডায় সোমা সরকার

 
আজ আকাশের মুখ ভার। গত দুদিন থেকেই মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছে। আজ একটু বৃষ্টি থামলেও আকাশে কালো মেঘ।  তারপর আবার অমাবস্যা।  কারেন্ট যাচ্ছে আর আসছে। 

মনের ভেতরে ভয়ের বাসা বাঁধতে শুরু করেছে ওদের পাঁচ জনের। মানে অমিত,অরুণ, সুপ্রিয়,রাজীব আর সুবীরের।ঐ পাঁচ জনের  যথেষ্ট বয়স হয়েছে। তবে ওদের মধ্যে অরুন একটু ছোটো। বছর পঁচিশেক। বাকি চারজন তিরিশ পেরিয়েছে।

সকলেই পেশাগত দিক থেকে পুলিশ। গন্ডগোল লাগলে, এলার্ম পিটলে এরা সবার আগে।  দায়িত্বের সাথে ডিউটি পালনে এদের জবাব নেই। কিন্তু আজ একটা ছোটো একসিডেন্টের কারনে ওরা সকলেই হাসপাতালের বেডে শুয়ে।  তাও পুলিশ হাসপাতাল। ছিমছাম। পরিষ্কার। হই হুল্লোড় নেই। পনেরো জনের বেড বিশিষ্ট হাসপাতালে এরা মাত্র পাঁচ জন।
একজন ডাক্তার। দুজন নার্স সহ পাহারাদার দুজন। সব মিলিয়ে মোট ১০ জন। তবে রাতে ডাক্তার রাউন্ড দিয়ে কোয়ার্টারে চলে যান । যদিও কোয়ার্টার টা হাসপাতাল ঘেঁষা। তবে সিরিয়াস রোগী থাকলে ডাক্তার বাবুও হাসপাতালে নিশিযাপন করতে বাধ্য হন।

আর নার্স দিদিরা রাত বারোটার পর নিজেদের ঘরের দরজা লাগিয়ে দেন। খুব দরকার না থাকলে কেউ বাইরে বেড়িয়ে পেশেন্টে রুমে যান না

তারপর তো আজ সেই কালো রাত। এমনিই  সবাই বলে কোনো কালে এই এলাকায় শ্মশান, কবর স্থান ছিলো।

তারপর হাসপাতালের সাথে লেগে আছে এক ভয়ঙ্করী  বটগাছ। রোজ রাতে কোন এক অশরীরী অত্যাচারে সকলেই মোটামুটি নাজেহাল। কখনো ছাদে নেত্য তো কখনো পেশেন্টের রুমে। তবে তা সবসময় রাতের অন্ধকারে।
আতঙ্কে গলা শুকিয়ে যায় রোগীদের। হাত পা অসাড় হয়ে আসে। বি পি রোজ রাতে চরচর করে কয়েক মিনিটের জন্য ঊর্ধ্বমুখী । যারা নাকি একবার ঐ হাসপাতালে আসে, পরে অসুস্থ হয়ে মরে গেলেও দ্বিতীয়বার জন্য ওখানে আসে না। ঐ অশরীরীর নাকি রুগীদের ঘরটাই খুব পছন্দের।  ঐ ঘর বাদে অন্য কোথায়  তার উপস্থিতি জানানটাও দেয়  না।

************************

ঐ দিকে অরুণ প্রথম দুই রাত শারীরিক অসুস্থতার কারনে ঘুমের ইনজেকশন পেয়েছিলো। তাই অশরীরী বলে কিছু আছে তা নিজে চাক্ষুষ করতে না পারলেও  চারজনের কাছে শুনে তার প্রাণ যায় যায়।

অন্যদিকে বাকি চারজন রাতে রোজ বালিশের নিচে তুলসীপাতা ও লোহা রেখে ঘুমোতো। কারন রিস্ক নিয়ে লাভ নেই। পাছে ভুত যদি ঘাড়ে চাপে…..

যদিও অমিত কাল রাতে ভালো মতো বুঝেছে তুলসীপাতা, লোহা এক্কেবারেই কোনো কামের না। গত রাতে কেউ একজন ওর মশারির ফিতে খুলে দিয়েছিলো।গায়ের চাদরটাও টেনে নামিয়েছে।হার্টবিট বেড়ে যাওয়া অমিত রাতে জোরে জোরে কাঁপা কাঁপা গলায়

ভূত আমার পুত, পেত্নী আমার ঝি,
রাম লক্ষণ সাথে আছে কে করবে কি…….

রাম রাম রাম……

মা বাঁচাও…….
বলে চিৎকার করেছে।

সে রাতের পর অমিতের আজ মারাত্মক জ্বর এসেছে। অমিত সহ বাকিরা সব ছুটি চায় ডাক্তারের কাছে…….
কিন্তু ডাক্তার তো সুস্থ না করে ছাড়বে না।



****************-
তবে আজ রাতে আরো একজন রুগী ভর্তি হলো।  তিনি ঐ পাঁচ জনের সিনিয়র।
কিন্তু শুয়ে শুয়ে ওরা  সেলুট ঠুকবে ক্যামনে সিনিয়ারকে…..
বেজায় সমস্যায় ঐ পাঁচ জন।
তাই শুয়ে শুয়ে স্যার স্যার…..

যদিও স্যার খুব আন্তরিক আজ।
বুঝলে  কাজের জায়গায় স্যার। এখানে আমরা সকলেই পেশেন্ট। তাই ফর্মালিটি ছাড়।

তা বল তোরা,এই  দুদিন তোদের কেমন কাটলো হাসপাতালের বেডে শুয়ে…?

সুযোগ পেয়েছে সব। তাই দেরি না করে সব হড়হড় করে বলতে শুরু করলো। এবার বেচারা সিনিয়র অফিসারটাও বেজায় চাপে পরে গেলো। ওনার আবার বিপির সমস্যা। উচ্চ রক্তচাপ।

জুনিয়র দের সামনে ভয় পেয়েছি দেখালে  মানসন্মানের ফালুদা। তাই চুপ থাকলেন।

****************************

অফিসার নিতিন বাবু একটু পেটুক টাইপের লোক। হাসপাতালে আসার সময় একটা বড়ো ক্যানে কিছু শুকনো খাবার গুছিয়ে নিয়ে এসেছেন। যদি বেশ কিছুদিন থাকতে হয়…..
তাহলে প্রিয় খাবার গুলো পাবেন কি করে..?
ওনার বৌ ওনাকে হাসপাতালে তা এনে দেবেন না।

****************************

যাই হোক রাত বাড়ছে। তারমধ্যে হঠাৎ করে কারেন্ট টাও অফ হলো। গার্ড এসে দুটো মোম জ্বালিয়ে বাইরে চলে গেলো। তারপর রাতে ঝিমঝিম বৃষ্টি শুরু হয়েছে আবার।
সবার মনে আতঙ্ক….
আজ আমাবস্যা…..
আজ যে কি তান্ডব করে……

তা সেই অশীরীরী পাবলিক মেয়ে ভুূত না ছেলে ভূত….?
বাচ্চা ভূত না বুড়ো ভূত, এ গুলো অমিতের মাথায় ঘুরছে।
ভয় পেলেও কচি মনের অমিতের মনে সব সময় উদ্ভট ভাবনা চিন্তা।

অমিত আজ মনে মনে চাইছে ভূতটা  ঐ বুড়োর ওপর চাপুক। ঐ বুড়ো অন্য সময় খুব খাটায়। ব্যাটা আজ একটু বুঝুক…

রাত বাড়ছে। সবাই ঘুম। কারেন্ট আসেনি। মোম গুলোও নিভে গেছে।

রাত বাড়ার সাথে সাথে ফাঁকা বেড গুলোর স্ট্যান্ড গুলো ঝনঝন আওয়াজ।  ট্রের মধ্যে রাখা ওষুধ গুলো নিচে পরে যাচ্ছে আপনা আপনিই।

অমিতের মশারীর ফিতে আজও কেউ খুলে দিয়েছে । জিনিসপত্র সরছে।  আওয়াজ হচ্ছে। সবাই দাঁতে দাঁত চেপে মাথা ঢেকে শুয়ে আছে। ঘুম পালিয়েছে।যত কিছুই  হোক ভূতের মুখ দেখা যাবে না। কোনো ভাবেই দেখা যাবে না।
দেখলেই পটল তুলতে হবে।এটা নিশ্চিত।

এরই মধ্যে নিতিন বাবুর চাদরটা কেউ একজন টানছে। বুড়োও শক্ত করে চাদর চেপে আছে। বুড়োর ভয় লাগলেও সাহসটাও চরম। নিতিন বাবু বুঝতে পেরেছে ভূত আজ ওকে ছাড়বে না। তাই মরার আগে হাল ছাড়া যাবে না। এরই মধ্যে নিতিন বাবুর মনে হচ্ছে একটা হাত টাইপের কিছু তোষকের নিচ দিয়ে মাথার কাছে আসছে। বুড়োর বি পি বাড়ছে চড়চড় করে। রাতে পেটুক নিতিন বাবু ক্যানের খাবার খেয়ে ঢাকনা লাগাতে ভুলে গেছেন।

হঠাৎ মনে হলো ঐ অশরীরী বস্তুটা  ক্যানের ভেতরে ঢুকছে।
নিতিন বাবু সময় নষ্ট না করে ক্যানের ঢাকনা লাগিয়ে দিয়ে চেপে বসলেন ক্যানের ওপর।

সারা রাত তান্ডবের পর ভোর হতে আর মাত্র কয়েক মিনিটের অপেক্ষা।

আলো ফুটতেই নিতিন বাবুর চিৎকার ভূুত ধরেছি। ভূত ধরেছি। যারা দেখতে চাস চলে আয়।

সবার উপস্থিতিতে নিতিন বাবু ভয়ে ভয়ে ক্যানের ঢাকনা খুলতেই ক্লান্ত বিধস্ত ভূত বেড়িয়ে এলো। সত্যি চার পেয়ে লেজবিশিষ্ট জ্যান্ত ভূত — একটা আস্ত ধেড়ে ইঁদুর।


***********





   

By nb24x7

দিনদুনিয়ার খাসখবর

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *