রবি আড্ডায় সাধন দাস
নাপিতবুড়ি খুনখুনে। সামনা সামনি দেখা হলে সবাই ঘুঁটেমা বলে ডাকে। মা ঘুঁটে বেচে খায়। বস্তা নিয়ে বেরিয়েছিলো গোবর কুড়োতে। মাঠে মাতালদের দেখে ভয় পেয়েছে। হাজার হলেও মেয়ে মানুষ! ছেঁড়া কাপড়ে খিদেও ঢাকে না, পেটও ঢাকে না। শরমে মা সেঁধিয়ে বস্তার মধ্যে ঢুকে পড়ে। তখন মা-কে এক চাংড়া মাটির ঢেলার মতো দেখাচ্ছিলো।
সত্যি কথা বলার আইন সম্মত একটা লিমিট থাকা দরকার। চার মাতালে এক বোতলে মদ খেলেই চার সত্যি এক হয়ে যায় না। চষা জমির আলপথে মোদো হোঁচট খেয়ে ঠেলে উঠেছে। রাগ গিয়ে পড়েছে সেই চাংড়া মেঠো ঢেলার উপরে।
– শ্লা, মাটি যে কী করে পাথর হয় এটাই আশ্চর্য!
যোদো আরো গম্ভীর। চাঁদের দিকে তাকিয়ে উদাস গলায় বলে- দেশ যে কী করে মাটির হয় সেটা আরো আশ্চর্যের!
রাম মুহূর্তে প্রতিবাদ পেশ করে- দূর! মাটি কোতায়? দেখছিস না, ঘুঁটের ঢিপি। দেশ গো মাতার ত্যাগে তৈরি।
শ্যাম চেঁচিয়ে উঠলো- ফালতু কথা। ওটা টুল। বসতে পারিসনি, তাই রাগ দেখাচ্ছিস!
হাঃহাঃহাঃ! যোদো হেসে উঠলো– হতেই পারেনা ওটা মালের চাট। খা খা, খেয়ে দ্যাখ।
যদো মাটির চাংড়ায় মোদোর মুখ খুসে ধরলো।
শ্যাম বললে- চাট হলে, পড়েই থাকতো না। কতো মাতাল এ রাস্তায় গেছে, তার ইয়াত্তা নেই।
রাম- মারবো এক ঠোনা, মাতলামি হচ্ছে? মাটি চাটতে চাটতে পাথর হয়ে গেছে, দেখতে পাচ্ছিস না?
চার ইয়ারের ঝটাপটি লেগে গেছে। পাথর না ঘুঁটে না টুল? না চাট? …
বস্তার ভিতরে মা ভয় পেয়ে গেছে। অনাহারি শুকনো গলায় চেঁচাচ্ছে- মেয়েমানুষ লুট হয়ে গেলো। কে কোথায় আছো বাঁচাও।
বস্তার বাইরে সে আওয়াজ চিঁ চিঁ রবে বেরিয়ে আসছে। ভোটেরদেশে মানুষ পিলপিলিয়ে ভীড় জমালো। সবাই দেখলো মাতালও বটে, মানুষও বটে, প্রতিবেশি রাম, শ্যাম, যদু, মধু চার মাস্তান, মান্যও বটে। ধূম ধাড়াক্কা মারামারি লাগিয়েছে।
ভয়ে পিছিয়ে একজন নিজেকে এবং পাশেরজনকে সান্ত্বনা দিয়ে বললো- পাড়া পিতিবেশি যখন অতো চেঁচানোর মতো খারাপ কিছু করবে না।
দুবলা একজন বললো- যাই বলিস ভাই, মোদোর খুব লেগেছে, মুখখানা কালো হয়ে গেছে।
যুধিষ্ঠির বললো- পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে, মাটির চাংড়াটা টুলও না, চাটও না।
কালনেমি মামা বললো- তবে পাথর নিশ্চয়। খুব শক্ত।
ঝগড়ুটে বললো- কাণা নাকি, মাটি দেখতে পাচ্ছো না?
রাত বাড়ছে। চাঁদ ডুবছে। মাতাল মাস্তানদের মারামারি অন্ধকারে ঢাকা পড়লেও হুপহাপ, দুপদাপ শোনা যাচ্ছে। লক্ষণ শেষ হওয়ার নয়। ভীড় ভাঙতে শুরু করলো। রাম, শ্যাম, যদু, মধু যে যার পক্ষ নিয়ে টুকরো হতে শুরু করলো। টুকরো হতে হতে যতোজন মানুষ ততো টুকরো হয়ে রাত্রির গায়ে মিলিয়ে যাচ্ছে।
মাটির ঢেলা মা বস্তার মধ্যে চেঁচিয়ে মরছে- কে কোথায় আছো বাঁচাও!