পাটশাক ও অন্যান্য
রবি আড্ডায় প্রদীপ ঘটক
কোদালটা মরাইতলায় রেখে কোমরের গামছাটা খুলে দুয়োরে দাঁড়ায় উত্তম।
গা দিয়ে গঙ্গা বইছে। সুঠাম চেহারার প্রতিটা পেশি ফুলে উঠছে।লুঙ্গিটা অর্ধেক ভিজে গেছে। লুঙ্গিতে মালকোঁচা-সামনে গুলগুচি আর পিছনে নিতম্বের বেশ কিছুটা দেখা যায়।
ছন্দা বলে “নুঙিটা একটু নামিয়ে পরতে পারনি? অসভ্য নোক কোথাকার।”
-কেনে, তোর নজ্জা নাগছে? ও ও ও নজ্জাবতী নতা আ আ আ।
ছন্দা কথার উত্তর দেয় না। বাঁ হাতে শাকের পেতেটা নিয়ে ডান হাতে ঘোমটাটা টেনে পুকুর ঘাটে চলে যায়।দুয়োরে নিমের ছায়া। খড়ের পালার আড়ালে বসে গামছা ঘুরিয়ে ঘাম মেরে ফেলে উত্তম। ছন্দা ফিরছে ঘাট থেকে কাঁচা তরকারি, শাক ধুয়ে।
রাস্তা থেকে অজয় হাঁক মারে “উত্তম, কোদাল নিয়ে কুতা গেহেলি রে?”
-ওই তো জল হবে বলচে তো। বীজতলার ঘাইগুলো বেঁদে এলাম। ভুলুকগুলো মারলাম বটে, তবে জল না হলে বোজা যাবে না।
- জল হবে বলচে? থালে বিকালে আমিও যাব।
একটু পর ছন্দা হাঁক মারে “ঘাম শুকোল? চান কর। আমার হয়ে গেছে।”
ঘাটের পাড়ে কড়াই মাঝছে ছন্দা। উত্তম বলে “পিটটায় একটু সাবান দিয়ে দিবি?”
ছন্দা কালি হাত ধোয়। লাইফবয় সাবানটা পিঠে বুলিয়ে পরুলের ছাল ঘসে দেয়। আরামে উত্তম বলে ওঠে “আঃ, কতদিন পর সাবান মাখলাম।”
-ওই হয়েছে যা। আর দিতে হবে না। আর তুই ঠারো হয়ে বসে কড়াই মাজছিস কেন? পেটে চাপ পড়বে।বাঁশ গাছের উপরে হেলেছে সূর্য। উঠোনে সাদা শতরঞ্চির মত পাতা আছে রোদ। ভাতের থালা নামিয়েছে ছন্দা। শুধু ভাত কোলে দিতে নাই।তাই আলু-উচ্ছে ভাতে।
জিজ্ঞাসা করে “শাগ দেব তোমায়?”
-কি শাগ?
-তোমার পছন্দের পাট শাগ।
-বেশি করে দে। এই পাট শাগ আর আলু উচ্ছে ভাতে দিয়েই আমি সব ভাত খেয়ে নেব। একটু রসুন দিসনি?
ছন্দা বলে “আজ এঁটু মঙ্গলবার করেচি। নিরামিষ খাব। পাতে দুটো ভাত রেখো।”
ছন্দা পাতে তরকারি দেয়। আলু-পটল-বড়ি-আলুমপুরের ডাঁটা। ছন্দার গলায় লাল কারের মাদুলি। দুই স্তনের মাঝে ঝুলছে।
আবার উত্তম হাঁ হাঁ করে ওঠে “আবার তুই ঠারো হয়ে বসেচিস?”
আরাম করে একটা বিড়ি খেয়ে মেঝেতে মাজুর পাতে উত্তম। ব্লাউজটা খুলে উত্তমের পাশে শোয় ছন্দা। মুদুনিতে ফ্যানটা ঘুরছে। চিত হয়ে সেদিকে তাকিয়ে উত্তম বলে “কি ছেলে চাস?”
-যা দেবে তাই। বাঁজানি নামটা তো ঘুচবে।
উত্তম ছন্দার পেটে হাত রাখে “নড়ছে তো রে?”
- হ্যাঁ। বলচি, কাল বাগ্দি পাড়া থেকে একটু চুনোমাচ এনে দেবে? ওরা নদীতে বিত্তি দেয়।
উত্তমের চোখ জড়িয়ে আসে। চোখে ভাসে একটা কালো ফুটফুটে ল্যালপেলে শিশু। পাটশাকের মতো।
গাঁ গঞ্জ এ দেশের প্রাণ। প্রাণের কথা ভালোবেসে বলেন প্রদীপ ঘটক। লেখককে অনেক প্রিয়তা।